সুমন সিকদারবরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রিফাত শরীফ নামে এক তরুণকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। চিৎকার করে অন্যদের সাহায্য চেয়ে, খুনিদের দুই হাতে জাপটে ধরে ও ধাক্কা দিয়ে সরিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি। তিনি এই ভয়াল স্মৃতির বর্ণনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঘটনার সময় খুনিদের প্রতিহত করতে কারও কোনও সাহায্য না পাওয়ার।

রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করতো নয়ন, হুমকি দিতো মেরে ফেলার

মিন্নি জানান রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে বিয়ে হয় তার। তবে এর আগে থেকেই এলাকার বখাটে সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড তাকে উত্ত্যক্ত করতো। মিন্নি বলেন, ‘বিয়ের আগে থেকেই নয়ন আমাকে বিরক্ত করতো। তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হবে, কথা না বললে মেরে ফেলবে, রাস্তাঘাটে আমার রিকশায় জোর করে উঠবে, এসব কথা কাউকে বললে মেরে ফেলবে বলে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিল। এরপর বিষয়টি পরিবারকে জানালে রিফাতের সঙ্গে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তবে বিয়ের আগ থেকেই রিফাতের সঙ্গে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল।’

যেভাবে রিফাতকে হত্যা করে নয়ন

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লড়াকু এই নারী  বলেন, ‘বিয়ের পরও নয়ন বন্ড আমাকে বিরক্ত করে আসছিল। বিষয়টি আমি আমার স্বামীকেও জানিয়েছিলাম। গতকাল (বুধবার, ২৬ জুন) সকালে আমি কলেজে যাই। রিফাত আমাকে কলেজ থেকে আনতে গিয়েছিল।  আমরা কলেজ থেকে বের হই। কলেজের গেটে ওঁৎ পেতে থাকা কিছু সন্ত্রাসী এ সময় রিফাতকে কলেজ গেট থেকে টেনে নিয়ে নয়ন বন্ড ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে নিয়ে যায়। তারা রিফাতকে আক্রমণ করে। মারার চেষ্টা করে। আমি অনেক চেষ্টা করেও ফেরাতে পারিনি। রাম দা নিয়ে আক্রমণ করে। আমি অনেক চেষ্টা করছি, অস্ত্র ধরছি, তাদের ধরছি, চিৎকার করছি। কেউ আগায়া আসে নাই। কেউ আমারে একটু হেল্প করে নাই। আমি একলা হাসপাতালে নিয়া গেছি।’ তিনি দাবি করে, রিফাতকে যখন দুই তিনজন রাম দা নিয়ে কোপাচ্ছিল, তখন আশপাশে এদের সহকারীরা দাঁড়িয়ে ছিল। ওই ছেলেগুলোই প্রথমে রিফাতকে মারধর করেছিল।   

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

রিফাত হত্যার বিচার ও খুনিদের সাজার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে মিন্নি বলেন, ‘দোষীদের যাতে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়, এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামরা করি। নয়ন, রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজির ফাঁসি কামনা করি।’ এলাকাবাসী সূত্রে ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও’র ফুটেজে দেখা গেছে, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা রাম দা নিয়ে রিফাতের ওপর চড়াও হয়। এ সময় মিন্নি তাদের বাধা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কিন্তু তার বাধা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা রিফাতকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। হাতে থাকা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে বারবার আত্মরক্ষার চেষ্টা চালান রিফাত। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। সন্ত্রাসীরা তার হাত-পা, বুক, পিঠসহ সারা শরীর কুপিয়ে রক্তাক্ত করে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মিন্নি এ সময় একবার সন্ত্রাসী নয়নকে, আরেকবার নয়নের সহযোগী দুর্বৃত্ত রিফাত ফরাজীকে আটকানোর চেষ্টা করেন এবং ‘বাঁচাও, বাঁচাও’, ‘না, না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু ততক্ষণে রাম দার কোপে মারাত্মক আহত হন রিফাত। এরপর তাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকালে রিফাত শরীফ মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এখন পর্যন্ত চন্দন নামের এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn