সাঈদ চৌধুরী, লন্ডন: শেফসহ দক্ষ জনশক্তির অভাবে বৃটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রিতে যে অচলাবস্থার সৃস্টি হয়েছিল, শীঘ্রই তার অবসান হতে চলেছে। গত ২০ বছর ধরে নানা রকম ক্যাম্পেইন পরিচালনার পর বৃটিশ ইমিগ্রেশন নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসছে। লো স্কীল ওয়ার্কারদের কাজের সুযোগ দিতে মাইগ্রেশন এডভাইজারি কমিটি কারি ইন্ডাস্ট্রির অনুকূলে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকে বৃটেনে কাজের সুযোগ পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এতে কর্মী সংকটে জর্জরিত বৃটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ শেফ ও দক্ষ জনশক্তি আনার সুবিধা হয়েছে। এক্ষেত্রে আবারো সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের। বৃটিশ ইমিগ্রেশন নীতিতে সমঅধিকারের দাবি নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়েছেন, তারা এটাকে নিজেদের প্রচারণার সাফল্য বলেই মনে করছেন। বৃটিশ কারি এওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এমবিই সহ অনেকেই কারি ইন্ডাস্ট্রির প্রতিকুলে প্রণিত ইমিগ্রেশন আইনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। বৃটিশ ইমিগ্রেশন নীতিতে পরিবর্তনের খবরে স্বভাবতই তারা এখন আনন্দিত।

কারি ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম মুখপাত্র এনাম আলী এমবিই বলেন, গত দেড় যুগ ধরে বৈষম্যমূলক ইমিগ্রেশন নীতির বিরুদ্ধে জোর লবিং ও প্রচারণা চালিয়ে আসছি। ২০০৫ সালে বৃটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড চালু হওয়ার পর এটা গণদাবিতে পরিনত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন থেকে শুরু করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে সহ বিভিন্ন স্তরে এই দাবি তুলে ধরেছি। কারি ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ২০১৬ সালে ১০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছিলাম। যেখানে কারি সমস্যা সমাধানের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। বহুদিন পর আজ তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবে টেকওয়ে সংযুক্ত রেস্টুরেন্ট সমূহে দক্ষ শেফ আনার সুযোগ সৃষ্টির দাবি ছিল। আমার এই দাবি ডেলিগেশনের সামনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন যথার্থ বলে মেনে নেন এবং পরবর্তীতে অফিসিয়াল চিঠিতে টেকওয়ে রেস্ট্রিকশন সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করার পক্ষে অভিমত প্রদান করেন। বহুমাত্রিক সাধনা ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এনাম আলী বলেন, বৃটিশ কারি এওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলাম, কারি ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ জনশক্তি আনার ক্ষেতে যে ডাবল স্ট্যান্ডাড নীতিমালা রয়েছে তা পরিবর্তন করতে হবে। তেরেসা মে তখন এই দেশে শেফ গড়ার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরীর পরামর্শ দেন। বৃটিশ মূল ধারা থেকেও বিভিন্ন সময় এধরণের দাবি জানানো হলে আমি লি রাজ একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করি। নর্থইস্ট সারে কলেজের সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমিতে শুধু শেফ হবার জন্য নতুন প্রজন্মের আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি।দীর্ঘ প্রতিবেদনে এই বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।

ইমিগ্রেশন নীতির বর্তমান পরিবর্তনকে দেড় যুগের প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে, সরকার আমাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে। সম্প্রতি বিবিসি, আইটিভি ও চ্যানেল ফোর সহ জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে একান্ত সাক্ষাৎকারে এনাম আলী এবিয়টি অরো বিসৃতভাবে বর্ণনা করেছেন। এদিকে গেল বছর বৃটেনের কারী হাউজের জন্য এশিয়ান দেশগুলোতে আরো বেশী সংখ্যক শেফ আনার অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান বৃটিশ এমপি পল স্কলি। হাউজ অব কমন্সের ডিবেইটে অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান। কারী হাউজ রক্ষায় এশিয়ান দেশ থেকে আরো বেশী দক্ষ শেফ আনার উপর জোর দেন তিনি। তার মতে বৃটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে কারী হাউজগুলো আবারো জমে উঠবে। পল স্কলি হাউজ অব কমন্সের অল পার্টি পার্লামেন্টারী গ্রুপ অন দ্যা কারী ক্যাটারিং ইন্ড্রাস্ট্রি‘র চেয়ারম্যান হিশেবে বক্তব্য রাখছিলেন। দক্ষ শেফ সংকটে জর্জরিত কারী শিল্পের বর্তমান দুরবস্থায় তিনি বৃটিশ ইমিগ্রেশন পলিসিকে দোষারোপ করেন। কমন্সের এই ডিবেইটে অংশ নিয়ে তার মতামতকে সমর্থন জানান কনজারভেটিভ এমপি এ্যান মেইন। তিনি বলেন, সরবকারের জটিল ইমিগ্রেশন পলিসির কারনে সংকটে পড়েছে ফুড ইন্ডাস্ট্রি। বৃটিশ বাংলাদেশি এমপি রোশনারা আলী এবং এমপি রূপা হকও এবিষয়ে বেশ জোরাল বক্তব্য দেন।

বৃটেনে রেস্টুরেন্ট সমূহে স্টাফ সংকট সমাধান, কাগজপত্রহীন দক্ষ স্টাফদের বৈধতাদান সহ নানা দাবীতে আন্দোলন করেছে বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন, বৃটিশ বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন ও ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিষ্ট অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে বর্তমানে ক্যাটারিং খাতে দক্ষ জনবলের চরম শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষ শেফ তৈরী না হওয়ায় কারি শিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ শিল্পের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। কারি শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নতুন ইমিগ্রেশন নীতির সুবিধা নিয়ে কারী ইন্ডাস্ট্রি আবারো প্রাণ চঞ্চল হবে, বিকশিত হবে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনমান।অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যবাহী কারী ইন্ডাস্ট্রিতে সৃষ্টি হবে নতুন মাত্রা।শেই সাথে সুস্টি হবে লন্ডনে আবারো রেষ্টুরেন্ট শ্রমিক আসার সুযোগ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn