বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির তালিকা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এ তালিকা দেখিয়ে তার পরামর্শ নেওয়া হবে। এরপর যে কোনো সময় সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। তালিকা চূড়ান্ত করলেও তাতে কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দায়িত্বশীল কেউই এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের পর এ তালিকায় যোগ-বিয়োগ হতে পারে। তাই চূড়ান্ত সংখ্যা এখনই প্রকাশ করছেন না তারা। আট বছর পর বেসরকারি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে এবার। তাই এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পাওয়ার তদবিরও অনেক বেশি। তালিকায় নিজের নির্বাচনী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম আছে কি না তা জানতে রোজই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসছেন অনেক জনপ্রতিনিধি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধি, বিশেষত সংসদ সদস্যদের এই বলে আশ্বস্ত করছেন যে, প্রতিটি সংসদীয় নির্বাচনী এলাকারই কমবেশি তিন থেকে চারটি প্রতিষ্ঠান এমপিও পাবে।সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও জানতে উদগ্রীব, কোন কোন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন সমকালকে বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুঁটিনাটি কিছু কাজ বাকি আছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তার পরামর্শ নিয়ে খুব শিগগিরই এমপিও’র তালিকা প্রকাশ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, চারটি প্রধান শর্ত পূরণ করতে পারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এবার এমপিওভুক্ত হবে। এ চারটি প্রধান শর্ত হলো- একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার। এ চারটি শর্তের প্রতিটির মান ধরা হয়েছে ২৫ নম্বর করে। এই ১০০ নম্বরের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা। এমপিওভুক্তির নীতিমালা-২০১৮ এর ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এমপিও পেতে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি থাকার নম্বর ২৫। প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ নম্বর এবং ১০ বা এর চেয়ে বেশি বছর হলে পাবে পূর্ণ ২৫ নম্বর। শিক্ষার্থী সংখ্যার জন্য থাকবে ২৫ নম্বর। কাম্যসংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান পাবে ১৫ নম্বর এবং এর পরবর্তী ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য পাবে ৫ নম্বর। পরীক্ষার্থীর সংখ্যায়ও রয়েছে ২৫ নম্বর। কাম্যসংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর, কাম্যসংখ্যার পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য ৫ নম্বর। পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পরিসংখ্যানেও স্বীকৃত পাওয়ার নম্বর ২৫। এর মধ্যে কাম্যহার অর্জনের ক্ষেত্রে ১৫ নম্বর, পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৫ নম্বর। এই নীতি অনুসরণে এবারের যোগ্য তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অতীতে দেখা গেছে, এমপিওভুক্তির নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করেও রাজনৈতিক তদবিরে পিছিয়ে থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। কখনও আবার কেবল এমপিওদের ‘ডিও লেটারের’ ভিত্তিতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এতে অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে, তালিকাভুক্ত হয়েছে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠান। এবার তাই ‘নিয়মনীতি’র মধ্যে থেকে এমপিওভুক্ত করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এমপিওভুক্তির কাজে সম্পৃক্ত দু’জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী কর্মকর্তাদের বলেছেন, নীতিমালা মেনে এমপিওভুক্তির তালিকা করতে। তারা সেভাবেই করেছেন। তবে নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকে এমপিদের ডিও লেটারকে ‘সম্মান’ করতেও তিনি বলে দিয়েছেন। তাই শুধু ডিও লেটারে নয়, শর্ত পূরণ করলে আর তা সংশ্নিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধির চাওয়ার সঙ্গে মিলে গেলে সেই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পাবে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রতিটি উপজেলার শর্ত পূরণকারী শ্রেষ্ঠ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই এমপিওভুক্ত করতে বলেছেন তিনি। তবে কোনো উপজেলায় আবেদন না থাকলে সেটি ভিন্ন কথা।

সূত্রমতে, এমপিওভুক্তির তালিকা চূড়ান্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৫৬টি সংসদীয় আসনে কোনো যোগ্য প্রতিষ্ঠান মেলেনি। ওইসব নির্বাচনী এলাকায় এমপিওভুক্তির নীতিমালার ২২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ ধারায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, নারীশিক্ষা, দুর্গম এলাকা, পার্বত্য এলাকা, চা-বাগান. হাওর-বাঁওড় ও চরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা আছে। নীতিমালার এই ধারার আলোকে এসব নির্বাচনী আসনে যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পাবে। তালিকা চূড়ান্ত করার পর দুটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই এবার এটি করা হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, কেবল নীতিমালার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী অথবা জামায়াতে ইসলামী নেতাদের প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তালিকায় স্থান পেয়েছে। পরে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এবার বিতর্কমুক্ত তালিকা করার জন্যই এ পন্থা নেওয়া হয়েছে। এ কারণেও এমপিওভুক্তির কাজে কিছুটা সময় লাগছে। মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, জুন ও জুলাইজুড়ে সংসদের বাজেট অধিবেশন চলছিল। ‘কৌশলগত কারণে’ সংসদ অধিবেশন চলা অবস্থায় এমপিওভুক্তির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়নি। আসছে ঈদুল আজহার আগেই ‘ঈদের বিশেষ উপহার’ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসতে পারে।  নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বশেষ এমপিওভুক্ত করা হয়েছে ২০১০ সালের ১৬ জুন। সেদিন সারাদেশের এক হাজার ৬০৯টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) এমপিওভুক্তি করা হয়। প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি সে সময়ে বেতনের আওতায় এসেছিল। বর্তমানে সারাদেশের প্রায় সাড়ে সাত হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সুুুত্র সমকাল

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn