বার্তা ডেস্ক :: ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক উজ্জল নক্ষত্রের নাম সালমান শাহ। যিনি তার অল্প দিনের ক্যারিয়ারে জয় করে নিয়েছিলেন কোটি মানুষের মন। যা আজো দৃশ্যমান।গত সোমবার সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। যেখানে উঠে এসেছেন জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূরের নামও। বাংলা চলচ্চিত্রের সাড়া জাগানো নায়ক সালমান শাহর বাসার গৃহকর্মী মনোয়ারা বেগম তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, সালমান শাহ সামিরাকেও ভালোবাসতেন, আবার শাবনূরকেও ভালোবাসতেন। শাবনূরকে বিয়ে করে দুই স্ত্রী নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। তবে সামিরা সতিনের সংসার করতে রাজি ছিলেন না। এই নিয়ে সালমান শাহ ও সামিরার মধ্যে ঝগড়া হতো। সালমানের বাবা প্রায় সময় আসতেন এবং তাদের বোঝাতেন। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতেও প্রায় একই কথা বলেন। মনোয়ারা তার জবানবন্দিতে বলেন, নায়িকা শাবনূর প্রায় সময় বাসায় আসতেন। সালমান শাহ থাকলেও আসতেন, না থাকলেও আসতেন। সালমান ও শাবনূরের সম্পর্কের ব্যাপারটা সামিরা সহ্য করতে পারতেন না। সালমান মাঝেমধ্যেই সামিরাসহ আমাদের সবাইকে চট্টগ্রামে সামিরার মায়ের বাসায় পাঠিয়ে দিতেন। একবার সামিরা ভাবির সঙ্গে আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। তখন সালমান ফোন করে সামিরাকে ভারত বা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তার ফোন পেয়ে সামিরা আমাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। এসে দেখেন সালমান নেই। শাবনূরকে নিয়ে তিনি চলে গেছেন। তখন সামিরা খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। অনেক কান্নাকাটি করেন। সামিরা সালমানকে বলেছিলেন, ‘তুমি যদি শাবনূরকে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসো, তাহলে তুমি আমাকে তালাক দিয়ে শাবনূরকে নিয়ে সংসার করো।’ তখন সালমান শাহ টেবিলে থাপ্পড় দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে তালাক দেব না।

জবানবন্দিতে মনোয়ারা আরও বলেন, আমি সালমান শাহর বাসায় কাজে যোগ দেওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার কোনো এক জায়গায় সিনেমার লোকদের অনুষ্ঠান ছিল। সামিরা সেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। রাতে তারা বাসায় আসেন। অনুষ্ঠান থেকেই তারা ঝগড়া করতে করতে এসেছিলেন। বাসায় এসেও তারা ঝগড়া করছিলেন। তাদের ঝগড়া চলার মধ্যেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে যাই। আবুল বাজার আনতে যায়। সকালে সালমানের বাবা এলে সামিরা ভাবি তাকে চা-নাশতা খাওয়ান। কিছুক্ষণ পর সালমান শাহ তার রুম থেকে বেরিয়ে পাশের ড্রেসিং রুমে ঢোকেন। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে এক মগ পানি দিতে বলেন। আমি পানি দেওয়ার পর সেটা খেয়ে আরও এক মগ চান। আমি পরপর দুই মগ পানি দেই। এরপর তিনি ড্রেসিংরুমে ঢুকে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন। এর কিছুক্ষণ পর ডলির ছেলে ওমর গোসল করে বের হয়। ওমরের কাপড় ছিল ড্রেসিংরুমে। ওমর তার কাপড়ের জন্য ড্রেসিংরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে সালমান শাহকে বাবা-বাবা বলে ডাকে। কিন্তু সালমান শাহ দরজা খুলছিল না। পরে ডলিও গিয়ে ভাই-ভাই বলে ডাকে। কিন্তু সালমান শাহ কোনো সাড়াশব্দ করেননি, দরজাও খোলেননি। সামিরা ঘরে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খোলার পর আমরা চিৎকার করে ওঠি। দেখি সালমান শাহ রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে।
এরপর সালমান শাহর ঝুলন্ত নিথর দেহ নামিয়ে আনা থেকে শুরু করে হাতে-পায়ে তেল মাখানো এবং পরে হাসপাতালে নেওয়ার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন মনোয়ারা। জবানবন্দির শেষ অংশে তিনি বলেছেন, আমরা ভয়ে দোতলার এক বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিলাম। মাগরিবের আজানের পর চট্টগ্রাম থেকে সামিরার মা ও বাবা আসেন। তারা আমাকেসহ সামিরা, ডলি, তার ছেলে ওমর ও আবুলকে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যান। এর এক মাস পর আমরা চট্টগ্রামে যাই। সেখানে তিন মাস থাকার পর আমাদের আবারও ধানমন্ডিতে এনে রাখে। এর কয়েকদিন পর আমাদের ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহকে ঢাকার বাসায় নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে প্রথমে হলি ফ্যামিলি ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn