গাজীপুরের পূর্ব চান্দরা এলাকার মদিনা বোর্ড মিলের কারখানায় প্রবেশের আগে শ্রমিকের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। এমনকি কারখানায় প্রবেশের সময় শরীরে জীবাণুনাশকও দেওয়া হচ্ছে। আছে হাত ধোয়ারও ব্যবস্থা। এটুকু পর্যন্ত ঠিক থাকলেও কারখানার ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক। কারখানার শ্রমিক মারুফ হোসেন অভিযোগ করেন, অল্প জায়গার মধ্যে গাদাগাদি করে অনেক শ্রমিক কাজ করছেন। সে জন্য কারখানার ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, কারখানার ভেতরেও শ্রমিকদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। আমরাও সেটি মেনে চলছি। মদিনা বোর্ডমিলের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ না মানার অভিযোগ মিলছে। তবে এ অভিযোগের বেশির ভাগই অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি মানের কলকারখানার বিরুদ্ধে। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালাচ্ছে। এদিকে কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, সেটি দেখার কথা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই)। এ ছাড়া শিল্প কলকারখানার বিভিন্ন বিষয় দেখভালের জন্য আছে শিল্প পুলিশও। সারা দেশে পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য কারখানা গত ২৬ এপ্রিল থেকে খুলতে শুরু করলেও ডিআইএফই ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা সীমিত পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় শিল্পকারখানা রয়েছে ৭ হাজার ৬০২টি। তার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উৎপাদনে ছিল ২ হাজার ৫৯২টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ২৬৯, বিকেএমইএর ৩৬৯ ও বিটিএমএর সদস্য ১৮৩টি। তা ছাড়া বেপজার অধীনের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) ৩৬৪ কারখানার মধ্যে ৩০৪টি চালু ছিল। অন্যান্য ৩ হাজার ৮৬৬ শিল্পকারখানার মধ্যে ১ হাজার ৩৬৭টি উৎপাদনে ছিল। কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের তাঁরা বলছেন, এতে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিনিয়তই বাড়ছে জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, পোশাকের বাইরে অন্যান্য শিল্পকারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা কম হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সহজ। তবে সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

অবশ্য ডিআইএফইর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বনামধন্য বড় কারখানাগুলো প্রায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানছে। তবে ছোট ও মাঝারিগুলো যথাযথভাবে মানছে না। সেসব কারখানার শ্রমিকেরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। আবার ঝুঁকির কারণে ডিআইএফইর পরিদর্শকেরাও মাঠপর্যায়ে তদারকির কাজটি যথাযথভাবে চালাতে পারছেন না। শ্রমিকনেতা সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, অনেক তদারকির পরও পোশাকশিল্পে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সেখানে অন্য শিল্পকারখানার অবস্থা ভালো বলার কোনো সুযোগ নেই। এরই মধ্যে বেশ কিছু পোশাকশ্রমিকের করোনা–আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির হিসাবে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পোশাকশিল্পের ৯৬ জন শ্রমিক ও ১ জন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ৫২ শতাংশই গত ২৬ এপ্রিল কারখানা খোলার পর আক্রান্ত হয়েছেন। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার বলেন, কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, পোশাকের বাইরে নারায়ণগঞ্জে ১৫৫টি শিল্পকারখানা চালু হয়েছে। তার মধ্যে সিমেন্ট, ওষুধ, রড, খাদ্য, ইলেকট্রনিকস, মেলামাইনসহ বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। কিছু কারখানায় প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। তবে অধিকাংশ কারখানায় সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, অনেক কারখানায় শ্রমিকদের মাস্কও দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে ১ হাজার ২২৭টি কারখানা চালু হয়েছে। এসব কারখানায় শ্রমিকের তাপমাত্রা পরীক্ষা, মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ কারখানায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি মানা হচ্ছে না। জানতে চাইলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, অনেক কারখানা উদ্যোগ নিলেও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তবে জেলা প্রশাসন কারখানাগুলো তদারকি করছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn