মহী জামান এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে- সাল এবং তারিখটা সঠিক মনে নেই। কতো হবে? এতো বছর পর বলতে পারছি না। ৭২ কিংবা ৭৩ । সুনামগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাফিক পয়েন্টে পুরাতন কলেজ ভবন। ভবনের দক্ষিনে ছাত্রলীগ আর উত্তর কামড়াতে আওয়ামীলগ অফিস। কলেজে পড়ি। আড্ডায় কিংবা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে। সকাল কিংবা সন্ধ্যা বন্ধুবান্ধবদের সাথে বেশীর ভাগ সময় এখানেই কাটে। এক দুপুরে এভাবেই আওয়ামীলীগ অফিসে আড্ডা চলছে। আমরাই রাজা। আমাদের দখলে অফিস। কারাকারা ছিলো স্পষ্ট মনে নেই। বেশ কয়েকজন। আমানুল্লাহর কথা মনে আছে। তার কথা মনে থাকার কারনও ছিলো। সভাপতির চেয়ারে সেই ছিলো। খুব মজাদার মানুষ। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছু বলতে পারে। দুষ্টের শিরোমণি। টেবিলের চার পাশে বসে আমরা সবাই তার কথা শুনছি। এ সময় সামনে রাখা টেলিফোনটা বিকট শব্দে ডেকে উঠে। কোন কিছু বুঝার আগেই আমানুল্লাহ উত্তর দেয়। ‘হ্যালো দফতর সম্পাদক দেলাওয় চৌধুরী বলছি।” মিথ্যে পরিচয় দেয়। স্বভাবটাই তার এ রকম। ও পাশ থেকে কে কথা বলছেন আমাদের বুঝার কথা না। আমানুল্লাহ ঠিকই বুঝতে পারে। ‘জি আমি দেখছি। আপনি একটু লাইনে থাকুন।’ তাকে শুধু এটুকু বলতে শুনি। পরে শুনলাম। ফোনের ও প্রান্তে ছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল।

সুনামগঞ্জের কিংবদন্তি। তৎকালীন সময়ের সারা জাগানো ফুটবল খেলোয়ার ছিলেন ইব্রাহীম পুরের নাজির হোসেন। ছোট নাজির নামে যিনি ছিলেন জাতীয় ভাবে সর্বাধিক পরিচিত। ঢাকার ফুটবলে বিজিএমসির হয়ে খেলতেন। শেখ কামাল আবহানী ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্টাতা । নাজির ভাইকে তার দলে নিতে চান। বাজারের সাধনা ঔষধালয়ের পাশে ছিলো ‘মায়া লন্ডী, নাজির ভাইকে সেখানে পাওয়া যাবে শেখ কামাল জানতেন। নাজির ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্যই আওয়ামীলীগ অফিসে ফোন করা। মায়া লন্ডিতে নাজির ভাইকে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের কথা হয়েছিলো। কি হয়নি। তা জানার আর সুভাগ্য আমাদের হয়নি। বঙ্গবন্ধু পুত্র মরহুম শেখ কামালের আজ জন্মদিন। ৭৫’ এর ১৫ আগষ্ট মাত্র ২৬ বছর বয়সে এই ক্রীড়া সংগঠককে মাতা-পিতা, ভাই, স্ত্রী ও আত্মীয় পরিজনসহ নির্মম ভাবে হত্যা করে দুষ্কৃতকারীরা।

আজ আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দ্রষ্টা। মহান নেতা। শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া সংগঠক মরহুম শেখ কামালের জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের ৫ জুলাই গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে এই মহান নেতা জন্মগ্রহণ করেন সে হিসাবে আাজ তার ৭০ তম জন্মদিন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ শেখ কামাল ছিলেন বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী। তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি এ অনার্স পাস করেন। তিনি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি শুধু উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধূলায় প্রচন্ড উৎসাহ ছিল তার। শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশনন্ড লাভ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন এবং শাহাদাত বরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণের সময় তিনি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

আজকে তার শুভ জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধা এবং অফুরন্ত ভালোবাসা। বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে যে ২টি কারনে আজ সমধিক খ্যাত। যে ২টি কারনে বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশকে আর পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না তার একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নাম আর অন্যটি ক্রিকেট। ৭২ সালে ক্রিকেটকে বুর্জুয়াদের খেলা বলে নিষিদ্ধ করা হলে এই মহান ক্রীড়া নায়ক শেখ কামালের আন্দোলনের মুখে সরকারকে ক্রিকেট খেলার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হয়। মুশফিক আর তামিমরা শেখ কামালের জন্যই আজ পৃথিবী ধাবড়ীয়ে বেড়াচ্ছে। ক্রিকেট আজ বিশ্বে বাংলাদেশকে অন্য এক মর্যাদায় প্রতিষ্টা করেছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn