সুনামগঞ্জসহ সকল জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ’র এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। তিনি জাতীয় সংসদে জানান, সুনামগঞ্জ জেলা সদরকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ‘সুনামগঞ্জ জেলা সদরে রেলওয়ে সংযোগের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সী (কেওআইসিএ)’র ২০১৮ সালের অনুদান সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রকল্পের ‘প্রজেক্ট কনসেপ্ট পেপার’ প্রণয়ন করে গত ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বরে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ইআরডিতে এবং ইআরডি থেকে গত ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারিতে কেওআইসিএ-তে প্রেরণ করা হয়। রেলপথ মন্ত্রী বলেন, সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকল্প কারিগরি, পরিবেশগত, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য ‘ভায়েবল’ বিবেচিত হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে সুনামগঞ্জ পুরাতন বাসস্টেশনে নাগরিক সংবর্ধনায় বাংলাদেশের প্রথম রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাতক-সুনামগঞ্জ রেলওয়ে লাইন চালুর ঘোষণা দিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জমি অধিগ্রহণের নির্দেশনা দেন। ওই সভায় ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক বলেছিলেন সরকার ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিলে তিনি বিনে পয়সায় সরকারকে জমি দিতে উদ্যোগ নিবেন বলে ঘোষণা দেন। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সে সময়ে ছাতক রেলস্টেশনে আরেকটি নতুন রেলেরও সংযোজন করেন। কিন্তু তার মন্ত্রীত্ব চলে যাবার পর বিষয়টি বিষয়টি মুখ থুবড়ে পড়ে। ওই সময় জেলা আইনজীবী সমিতিও রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনকে এই দাবিতে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
জানা গেছে, কলোনী আমলে বৃটিশ সরকার অবিভক্ত ভারতের চেরাপুঞ্জি (ছাতক সংলগ্ন) থেকে কমলা লেবু ও চুনাপাথর পরিবহনের লক্ষ্যে ছাতকে রেললাইন নির্মাণ করে। কিন্তু ছাতক থেকে মাত্র ২৬ কি.মি. দূর সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণ অধরাই রয়ে যায়। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলেও ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলেও নানা কারণে ঝিমিয়ে পড়ে। ১৯৬৬ সনে সুনামগঞ্জের তৎকালীন এসডিও এ. জেড. এম শামসুল আলম ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যখন ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করে তখনো জেলার বাসিন্দারা রেললাইন সম্প্রসারণের দাবি তুলেন বিভিন্ন ফোরামে। ২০০১ সালে জেলা শহরের কিছু তরুণ ‘রেলওয়ে বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে কয়েকটি সভা করে রেললাইন সম্প্রসারণের দাবি জানান। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জেলার সুধীজন প্রধান উপদেষ্টাকে ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণে একপি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
গত বছর সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণে পৃথক ডিও লেটার প্রদান করেন। ২০১৫ সনে সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিকও ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণে একটি ডিও লেটার দেন। গত বছর অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানও একনেকের সভায় সুনামগঞ্জ-ছাতক রেল লাইন সম্প্রসারণের দাবি জানান। তাঁর দাবির প্রেক্ষিতে রেলমন্ত্রী, রেলসচিব সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। পৃথকভাবে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে ছাতক, সুনামগঞ্জ, মোহনগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণের আহ্বান জানান। এছাড়াও গত বছর জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ নামে রেল উদ্বোধন করতে গিয়ে দেশের ‘দুর্গম এলাকাসহ সকল জেলা’ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে বলে বক্তব্যে বলেছিলেন। তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই দুর্গম হাওর এলাকা সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সুধীজন জানান।
এদিকে গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে দেশের রেলাইন সম্প্রসারণ বিষয়ে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ মন্ত্রীর কাছে জানতে চান। তাঁর নির্ধারিত প্রশ্নে জবাবে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কেওআইসিএ)’র ২০১৮ সালের অনুদান সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রকল্পের ‘প্রজেক্ট কনসেপ্ট পেপার’ প্রণয়ন করে গত ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বরে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ইআরডিতে এবং ইআরডি থেকে গত ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারিতে কেওআইসিএ-তে প্রেরণ করা হয়। রেলপথমন্ত্রী আরো বলেন, সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকল্প কারিগরি, পরিবেশগত, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য ‘ভায়েবল’ বিবেচিত হলে প্রকল্পটি বাস্তায়নের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সংসদে মন্ত্রীর বক্তব্যের পর আশার আলো দেখছে সুনামগঞ্জবাসী। তারা দ্রুত ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণে কাজ শুরুর অনুরোধ জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn