বার্তা ডেস্ক:: সিলেটে বড় দুটি দলের সম্মেলনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ সরগরম হতে শুরু করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাঠের রাজনীতি আর দলকে আরও সুসংহত করতে ইতোমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।

সিলেট আওয়ামী লীগ: দীর্ঘ আট বছরেও নিজেদের আওতাধীন সব উপজেলা ও ওয়ার্ড শাখার সম্মেলন করে কমিটি দিতে পারেনি সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। অবশেষে কেন্দ্রের কঠোর বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসেছেন সিলেট আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। সম্মেলন নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোড়জোড়। এরই মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং মহানগর শাখার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে বৃহস্পতিবার বসছে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক। এ বৈঠকেই মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ হতে পারে; এমন তথ্যই জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। অন্যদিকে উভয় শাখার আওতাধীন উপজেলা ও ওয়ার্ডগুলোতেও সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতীক্ষিত সম্মেলনকে ঘিরে সিলেট আওয়ামী লীগে এখন সাজ সাজ রব পড়েছে। আর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ৫ ডিসেম্বর প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠছে। এর আগে সিলেট আওয়ামী লীগে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয়েছিল ২০০৫ সালে। এরপর ২০১১ সালে সম্মেলন ছাড়াই গঠিত হয় কমিটি। তিন বছর মেয়াদি সে কমিটি ইতোমধ্যে পার করে দিয়েছে আট বছর। এ দীর্ঘ সময়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নিজেদের আওতাধীন ১৩টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৬টিতে আংশিক কমিটি করতে পেরেছে। আর মহানগর আওয়ামী লীগ ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে কমিটি করেছে ২১টিতে। এত সময় পেয়েও সম্মেলন কিংবা কমিটি করতে না পারায় সিলেট আওয়ামী লীগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। সম্প্রতি সিলেটে এসে তারা ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব শাখার সম্মেলন করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে যান দায়িত্বশীলদের। এরপরই নড়েচড়ে বসেন সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরী বলেন, ৫ ডিসেম্বর জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার সম্মেলনের আগে ৩১ অক্টোবর বালাগঞ্জ উপজেলা, ১ নভেম্বর সিলেট সদর উপজেলা, ৫ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ, ৭ নভেম্বর বিয়ানীবাজার, ৯ নভেম্বর দক্ষিণ সুরমা, ১০ নভেম্বর কানাইঘাট ও ১৪ নভেম্বর গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অন্য ৬টি উপজেলায় নভেম্বরের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। অন্যদিকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগও ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্মেলন সারতে চায়। এর আগে চলতি অক্টোবরেই বাকি থাকা ৬টি ওয়ার্ডে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অক্টোবরেই আমরা ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করতে চাই। ১০ অক্টোবর কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকেই সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ হতে পারে।’

সিলেট বিএনপি: ঝিমিয়ে পড়া সিলেট জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। যে কমিটি ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে ২ অক্টোবর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কমিটির অনুমোদন দেন। জেলা শাখায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। অনেকে প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতি শুরু করেছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। এ ছাড়া দলে কোন্দল-বিভাজন এড়াতে সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন তিন ফরম্যাটে হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই হবে। তিন ‘ফরম্যাটে’ জেলার সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে; এমনটাই জানিয়েছেন সিলেট বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলেট মহানগর বিএনপির ক্ষেত্রেও ‘আহ্বায়ক’ কমিটি আসছে খুব তাড়াতাড়ি; এমনটা জানা গেছে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন বলেন, যেহেতু আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে তাই স্বাভাবিকভাবেই সম্মেলনের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেবে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তবে এ কমিটি কবে আসছে এমন প্রশ্নে মহানগর বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, এই মুহূর্তে দিনক্ষণ ঠিক করে বলা মুশকিল। আমরা আশা করি, সহসাই আসছে আহ্বায়ক কমিটি। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাধারণত আহ্বায়ক কমিটিকে ৩ মাস সময়ের মধ্যে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নিয়ম থাকে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। জেলা শাখায় সভাপতি পদে নির্বাচিত হন আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলী আহমদ। এরপর গঠন করা হয় ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট ‘ঢাউস’ কমিটি। ২ অক্টোবর দলের মহাসচিব সিলেট জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। এ কমিটির অনুমোদনের পর সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে তৃণমূলের কর্মীরাও গা-ঝাড়া দিয়ে উঠছেন। সূত্র: সময়ের আলো

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn