যুক্তরাজ্য সফররত বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর পত্মী ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেস্টা তাহসিনা রুশদির লুনা বলেছেন, সরকার কোনভাবেই ইলিয়াস আলীর গুমের দায় এড়াতে পারে না। একজন রাজনীতিবিদকে গুম করার মাধ্যমে তার আদর্শকে শেষ করা যায়না। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবলো উচিত। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে কি কারনে গুম করা হয়েছিল। কি তার অপরাধ ছিল। তিনি সিলেটের মানুষকে একই কাতারে নিয়ে এসেছিলেন এটিই তার অপরাধ ছিল। ইলিয়াস আলী ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে একটি কুচক্রি মহল তাকে গুম করে রেখেছে।

তাহসিনা রুশদির লুনা গত ১৮ জুলাই মঙ্গলবার বিকালে বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরবাসী উদ্যোগে আয়োজিত তার সম্মানে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথাগুলি বলেন। এম ইলিয়াস আলীর ছোট ভাই ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আছকির আলীর পরিচানায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বিএনপি ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অংশনেন।

 

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাহসিনা রুশদির লুনা আরো বলেন, ইলিয়াস আলী একটি সংগ্রামের নাম, ইলিয়াস আলী একটি আন্দোলনের নাম। আমি আজকে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি যুক্ত ছিলাম যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ছিলাম। আমি স্বৈরাচর বিরোধী আন্দোলনেও সম্পৃক্ত ছিলাম। তারপর পারিবারিক জীবন শুরু করার পর রাজনীতি থেকে একটু দূরে ছিলাম। কারন আমার স্বামী ইলিয়াস আলীর রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তার পাশে থেকে সহযোগিতা করার চেস্টা করেছি।

আজকে আমার এই রাজনীতি অঙ্গনে প্রবেশ সেটি আমার ইচ্ছাকৃতনয়। আমরা এলাকার মানুষের কারনেই সম্পৃক্ত হওয়া। অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাকে রাজনীতিতে জড়াতে হয়েছে। ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভার আনছার আলী গুম হওয়ার পর থেকেই আমাকে আস্তে আস্তে রাজনীতিতে আসতে হয়েছে। তিনি ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন ইলিয়াস আলীর বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে দেখবেন। উনারা বলেছিলেন মানবতাই বড় কথা। কিন্তু আজ ৫ বছর পরও এর কোন সুরাহা হয়নি।
তিনি বলেন, আমার নেতা হওয়ার ইচ্ছা নেই। আমি কোন নেতা হতে আসিনি। নেতা হওয়ার ইচ্ছা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির শেষেও রাজনীতিতে থাকতে পারতাম। আমার রাজনীতিতে আসার একটাই উদ্দেশ্য ইলিয়াস আলীর বিষয়ে একটি ফয়সায়লায় যেতে হবে। ইলিয়াস আলীর বিষয়ে জানতে হবে। ইলিয়াস আলীকে কেন গুম করা হয়েছে, ইলিয়াস আলী কোথায় আছে সেটি আমাদের জানতে হবে।

তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী গুমের পর আমাদের গ্রামের বাড়ীতে ঈদে সময় গেলে সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী আমাকে ইলিয়াস আলীর অবর্তমানে নেতৃত্ব দেয়ার জোরদাবী জানালে আমার শাশুড়ীর নির্দেশে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে রাজনীতি শুরু করি। আমি বিগত উপজেলা নির্বাচনগুলিতে বহু জায়গায় গিয়েছি। তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যাশা করেন ইলিয়াস আলীর রাজনীতি আমার মধ্য দিয়ে দেখতে কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে ইলিয়াস আলীর সার্বক্ষনিক একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। উনার কাছে ব্যক্তি জীবনের চাইতে রাজনীতিক জীবন বেশি মূল্যবান ছিল। তিনি পরিবারের চেয়েও রাজনীতিতেই বেশি সময় দিতেন। তিনি বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমাননগরের মানুষদের তিনি ব্যক্তিগতভাবে ছিনেন এবং তিনি অনেকের বাড়ীতেও গিয়েছেন। আমি এখানে সম্পূর্ণই নতুন। আমি সবাইকে এতে ছিনিনা। অনেককেই আমি শুধু নামে জানি, ব্যক্তিগতভাবে সবার সাথে পরিচয় নেই। আমি চেস্টা করছি সবার সাথে যোগাযোগ করার। উনার পর্যায়ে আসাটা খুবই কঠিন ব্যাপার। সবচেয়ে বড় কথা আমরা মানসিক অবস্থা এখনো পর্যন্ত ততটা ভাল নেই।

তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমি যখন ঘরে আসি, আমার সন্তানদের দিকে তাকাই তখন আমি অনুভব করি ইলিয়াস আলীর কথা। আমার মাথার উপর এখন কেই নেই। তিনি রাজনীতির কারনে মাসের পর মাস ঘরের বাইরে থাকলেও আমাকে ফোন করতেন। সন্তানদের বিষয়ে জানতে চাইতেন। এসব স্মৃতি ভুলে রাজনীতি করা খুবই কঠিন। তিনি নেতাকর্মীদের দেয়া বক্তব্যে বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর বিএনপিতে নানান অভ্যন্তরিন কোন্দলের প্রসঙ্গে বলেন, ইলিয়াস আলী যখন বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এলাকায় নির্বাচনে প্রার্থী হন তখন বিএনপির ভোট ছিল মাত্র ৮হাজার। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হয়েছিল দেড় লাকের বেশি ভোট পেয়ে। বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরের বিএনপি ইলিয়াস আলীর হাতে গড়া বিএনপি। আস্তে আস্তে সবই ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, ইলিয়াস আলীর এই বিজয়ের প্রেরনা দিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পরে আপনারা প্রবাসে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি মন্ত্রীদের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে মানবিধাকারের পক্ষে জোরালো লবি করেছেন। হাউস অব কমন্স এবং হাউস অব লর্ডসে মোশন এনে ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশের সরকারকে তারা জোরালো দাবি জানিয়েছেন। এখনো প্রতি বছর আপনারা প্রতিবাদ সভা করে ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আরো বলেন, আমাকে যুক্তরাজ্যে আসতে বাঁধা দেয়া হয়েছে দুই বার। প্রথমে আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে। তিনিবার আদালতের রায় সত্ত্বেও আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে তারপর ফ্লাইট আটকে রেখে আমাকে যুক্তরাজ্যে আসতে দেয়া হয়েছে। আমি আমার ছেলে গ্রেজুয়েশনের জন্য এসেছি। অথচ আমাকে বারবার বাঁধা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর খুব ইচ্ছা ছিল তার ছেলে ব্যারিস্টার হবে। অর্নব গ্রেজুয়েশন করেছে অথচ আমাদের সেই আনন্দ নেই। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের সাথে দেখা করা একটি ফরয কাজ হিসেবে আপনাদের সাথে দেখা করেছি। তিনি বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এলাকার মানুষের সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেন, আপনাদের সাহসেই আমি দাঁড়িয়ে আছি। আপনাদের সহযোগিতা নিয়েই আগামীতে এগিয়ে যাব। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনার প্রথম থেকেই বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে জানান।

তিনি ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত করেন এবং যারা আহত এবং জেল জুলুম সহ্য করেছেন তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলজার আহমদ এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকসহ বিশ্বনাথ বালাগঞ্জ ওসমানীনগরের সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতৃবৃন্দ। সভায় উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল হামিদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রধান উপদেস্টা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ সুনামগঞ্জ বিএনপি নেতা সাবেক সেনা কর্মকর্তা অলি আহমদ, নিউহাম কাউন্সিলের কাউন্সিলার আয়শা চৌধুরী, এম ইলিয়াস আলীর দুই পুত্র আবরার ইলিয়াস অর্ণব ও লাবিব সারার– বিস্তারিত নাম আরো আসছে

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn