নূর মোহাম্মদ –

সিন্ডিকেটের কবলে একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই। চলতি বছর বিনামূল্যের বই নির্ধারিত সময়ে না দেয়ায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এই জরিমানা মওকুফ করাতে সিন্ডিকেট করেই একাদশে বই আটকে দিয়েছে কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান। এতে কলেজ জীবনের প্রথম দিনের আনন্দ মাটি হয়েছে নতুন ক্লাসে আসা ১২ লাখ শিক্ষার্থীর। কবে নাগাদ এই বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাবে তাও বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে লাইব্রেরি থেকে বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বই সংকটের করণীয় ঠিক করতে গতকাল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বৈঠক করেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। অথচ ১লা জুলাই রাজধানী মতিঝিলে এনসিটিবিতে ঘটা করে বই বিতরণ অনুষ্ঠান করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ১লা জুলাই সারা দেশে একযোগে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করেছে কলেজগুলো। কিন্তু বোর্ডের বই না পাওয়ায় কেবল ক্লাসে আসা-যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে শিক্ষা কার্যক্রম। কবে নাগাদ বই পাবে তার নিশ্চয়তা না পেয়ে বেশি দামে লাইব্রেরি থেকে বই কিনছে শিক্ষার্থীরা।
এনসিটিবি ও মুদ্রণ শিল্প সমিতির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, চলতি বছরের পাঠ্যবই সময়মতো সরবরাহ না করায় প্রায় দেড়শ’ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে সরকারি ক্রয় আইন (পিপিআর) অনুযায়ী অন্তত ৩৫ কোটি টাকা জরিমানা করে এনসিটিবি। এদের মধ্যে সরকার প্রিন্টার্স, আনন্দ প্রিন্টাস, ব্রাইট প্রিন্টার্সকে প্রায় ৫ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়। এই তিন চারটি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে বই থেকে শুরু করে এনসিটিবির অধিকাংশ কাজ করে। একাদশের প্রায় ৬৫ শতাংশ বই এই তিনটি প্রতিষ্ঠান নামে বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে বাগিয়ে নেন। গত মাসে বিনামূল্যের বই দেরিতে দেয়ায় তাদের বিল আটকে দিয়ে জরিমানা করে। এরপরই তারা বেঁকে বসে। সবাই মিলে সিন্ডিকেট করে একাদশ শ্রেণির বই আটকে দেয়। বিষয়টি টের পেয়ে এনসিটিবির একজন সদস্য বিকল্প পন্থায় সময় মতো বই আদায় করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সদস্য বলেন, জরিমানা করার পর তারা আমাকে মৌখিকভাবে বলেছে, এই জরিমানা মওকুফ না করলে একাদশ শ্রেণির বই নিয়ে ঝামেলা করবে। এখন দেখছি তাই হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহার রুমে গিয়ে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ কাজের দায়িত্বে থাকা এনসিটিবিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী বলেন, বই নিয়ে ঝামেলা চলছে। এটা উত্তরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করছি। এর কারণ বলতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন।
জানা গেছে, একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়া হয় না শিক্ষার্থীদের কিনতে হয়। এনসিটিবি থেকে পাণ্ডুলিপি অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশক পাঠ্যবইগুলো ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে। প্রকাশকরা সময়মতো বই না দেয়ার জন্য ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে ট্রাক বন্ধ থাকাকে দায়ী করছে। তবে চলতি সপ্তাহেই তা পাঠিয়ে দেয়ার কথা জানান একাধিক প্রকাশক। তবে মুদ্রণ শিল্প সমিতির একাধিক নেতা জানান, সিন্ডিকেট কবলে পড়া এই শ্রেণির বই এখনো ছাপা হয়নি। পাঠ্যবই ছাপাতেই অন্তত আরো ১৫ দিন লাগবে। এরপরে দেশের সব জায়গার লাইব্রেরিতে বইগুলো পাঠানো হবে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের বইগুলো কিনতে হবে। নানা সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল পাল এবং প্রকাশনী পুঁথিনীলয়’র মালিক শ্যামল পাল বলেন, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বই পৌঁছে যাবে আশা করি। তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ছিল। যার ফলে সময়মতো বই দেশের কোথাও পাঠানো যায়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn