ওয়েছ খছরু :–ভয়ঙ্কর পেশায় জড়িয়ে পড়েছিল জকিগঞ্জের শহিনুর আক্তার ও নাজমিন বেগম তামান্না। সম্পর্কে তারা খালা-বোনঝি। দু’জনই স্বামী পরিত্যক্তা। বয়স বেশি না হলেও স্বামীর সোহাগ জুটেনি তাদের কপালে। অভাব-অনটনের সংসার। অসহায় জীবন। পিতার বাড়িতেই বাস তাদের। কিন্তু তাদের এই সুযোগ নিলো মাদক চোরাকারবারিরা। ওই চক্রের প্ররোচনায় মাদক বহনেই জড়িয়ে পড়লো তারা। মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা বহন করছিলো ইয়াবা। জকিগঞ্জ থেকে ৩৮০৫ পিস ইয়াবার চালান নিয়ে তারা আসে সিলেটে। সেখান থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে র‌্যাব সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর শহিনুর ও তামান্নাকে নিয়ে তোলপাড় চলছে জকিগঞ্জে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শহিনুর ও তামান্না প্রায় দিনই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। আর ফেরে রাতে। কোথায় যায়, কী করে সেটি কারো জানা ছিল না। গ্রেপ্তারের পর তাদের পেশা সম্পর্কে এলাকার মানুষ জেনেছে। শহিনুর আক্তার। বয়স ২৮ কিংবা ৩০ বছর। বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার গনিপুর গ্রামে। পিতা আব্দুর রশিদ। আর তামান্নার পুরো নাম নাজমিন বেগম তামান্না। বয়স ২০ কিংবা ২১ বছর। উপজেলার উত্তরকুল গ্রামের আবদুল জব্বারের মেয়ে সে। র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার মেজর মো. শওকাতুল মোনায়েম প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গত রোববার রাতে সিলেট নগরীর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় র‌্যাবের একটি টিম মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় তারা রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকে ৩৮০৫ পিস ইয়াবাসহ তামান্না ও শহিনুরকে আটক করে। আটকের পর র‌্যাব সদস্যরা তাদের তল্লাশি করে অ্যাংলেটের ভেতর থেকে আটক করে ওই ইয়াবার চালান। পরে র‌্যাব সদস্যরা ইয়াবার চালানসহ রেলওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। রেলওয়ে পুলিশ জানায়, ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর শহিনুর আক্তার ও তামান্না বেগম নিজেরাই ইয়াবা বহনের কথা স্বীকার করেছে। তারা জানায়, মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা ওই ইয়াবার চালান জকিগঞ্জ থেকে সিলেটে নিয়ে আসে। সিলেট পর্যন্তই তাদের জার্নি সমাপ্ত ছিল না। এই ইয়াবার চালান নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ঢাকার মিরপুরে। সেখানে থাকা ইয়াবা চক্রের হাতে তাদের ওই চালান তুলে দেয়ার কথা ছিল। এ কারণে তারা সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে গিয়ে তারা ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলে। এরপর যখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল, তারা তখন র‌্যাব সদস্যরা তাদের আটক করে। বিশেষ ব্যবস্থায় ওই দুই নারী এই ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিল। তারা হাঁটুর উপরে বিশেষ অ্যাংলেটের মাধ্যমে এই চালান বেঁধে ফেলে। এরপর তারা জকিগঞ্জ থেকে ঢাকার পথে রওয়ানা দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা সিন্ডিকেটের নাম বলতে পারেনি। তবে এবার প্রথমবারের মতো ইয়াবার চালান বহন করতে গিয়ে তারা ধরা পড়েছে বলে আটকের পর জানিয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশের ধারণা- শুধু তামান্না ও শহিনুর বেগম নয়। ইয়াবা বহনে একটি মহিলা চক্র রয়েছে। মহিলাদের দিয়ে নিরাপদে ইয়াবা বহন সম্ভব- এ কারণেই ইয়াবা চক্রের সদস্যরা অসহায় নারীদের দিয়ে ইয়াবা পাচার করছে। সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, ইয়াবা বহন ও ইয়াবা বিক্রি এবং সেবনে এখন নারীরাও জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণেই পুলিশ অভিযানে নারী পুলিশ সদস্যদের রাখা হয়। তিনি বলেন, নারীদের দিয়ে মাদক বহন নতুন নয়। চোরাকারবারিরা নিরাপদ ভাবে মাদক বহনের জন্য নারীদের ব্যবহার করছে। আর চোরকারবারিদের ফাঁদে পড়ে নারীরা কারাগারে যাচ্ছে, বিচারও হচ্ছে তাদের। জকিগঞ্জের এলাকাবাসী জানায়, শহিনুর আক্তার সম্পর্কে তামান্নার খালা। শহিনুর আক্তারের পিতা আবদুর রশিদ বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি। হাঁটাচলা করতে পারেন না। কয়েক বছর আগে আলমগীর নামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়েছিল শহিনুরকে। কিন্তু স্বামীর সংসারে বেশিদিন টিকেনি শহিনুর। পিতার বাড়িই তার শেষ আশ্রয়। ওখানে বসবাস করছিল। তবে, প্রায় দিন সকালে শহিনুর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। গনিপুর গ্রামের লোকজন জানেন, শহিনুর আক্তার উত্তরকুলে তার বোনের বাড়ি যাচ্ছে। সকালে বের হয়ে সে ফিরতো রাতে। কখনো কখনো সঙ্গে ফিরে তার বোনজি তামান্না। তামান্নার বয়স বেশি নয়। দুই বছর আগে রিয়ান আহমদ নামের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। ওই বিয়ে বেশিদিন টিকেনি। এরপর থেকে শহিনুরের সঙ্গে তামান্নার জুটি ছিল। তারা একসঙ্গে জকিগঞ্জে চলাফেরা করতো। সিলেটে আসা যাওয়া করতো। এ কারণে তাদের চলাফেরা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছিল এলাকায়। স্থানীয় গনিপুর গ্রামের বাসিন্দা ময়নুল হক জানিয়েছেন, ঘটনার আগের দিন তামান্না তার খালা শহিনুরের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। এরপর সকালের দিকে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হয়ে যায়। কোথায় যায় আমি জানি না। পরে শুনলাম তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা কী করে, কোথায় যায়, সেটি গ্রামের মানুষ জানতেন না বলে জানান তিনি। স্থানীয় সুলতানপুর ইউনিয়নের মেম্বার আবদুস সুবহান জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে শহিনুরকে চেনেন না। তবে আবদুর রশিদের পরিবার খুবই অভাব অনটনের মধ্যে রয়েছে। রশিদের এক ছেলে ভারতে থাকে। ওখানেই সেটেল্ড হয়ে গেছে। আরেক ছেলে খুনের মামলায় পলাতক। মাঝেমধ্যে গ্রামের লোকজন তাদের সহযোগিতা করে বলে জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn