যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তরুণীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন ফখরুল আহমদ (২৫)। ধীরে ধীরে সেই সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে। দু’জনে তখন হয়ে পড়েন বেসামাল। ফোনে ভিডিওকলে কথা বলার সময় খোলামেলা পোশাকে হাজির হতেন ওই তরুণী। কৌশলে ভিডিও কলের সবকিছু রেকর্ড করে রাখতেন ফখরুল। একপর্যায়ে দু’জনের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এরপরই আসল রূপ বেরিয়ে আসে ফখরুলের। ওইসব খোলামেলা ভিডিও দেখিয়ে ওই তরুণীর কাছে টাকা দাবি করতে থাকেন তিনি। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ওই তরুণী। ফখরুলের অব্যাহত টাকা দাবির বিষয়টি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন ওই তরুণী। একপর্যায়ে বিষয়টি জেনে যান তরুণীর বড় ভাই (৪২)। গেল ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ানীবাজার থানায় জিডি করেন তিনি। পরদিন অভিযোগ দেন র‌্যাবের কাছে। এরপরই বাড়িছাড়া হয়ে যান ফখরুল। তবে র‌্যাবের হাতেই ধরা পড়েছেন শেষপর্যন্ত। শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকালে ফেরিওয়ালার বেশ ধরে গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা সিলেটভিউকে জানিয়েছেন, ফখরুলের স্মার্টফোনে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওই তরুণীরই নয়, আরো এক মেয়ের অশালীন ভিডিও পাওয়া গেছে। ফখরুল আহমদের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আরিশ খাঁ টিলা এলাকায়। তার বাবার নাম ফারুক মিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ওই তরুণীর বাড়িও একই এলাকায়। র‌্যাব জানায়, বছর চারেক আগে দেশে এসেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের ওই তরুণী। ওই সময় ফখরুলের সাথে তার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তরুণী যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেলেও ফোনে যোগাযোগ রাখেন ফখরুলের সাথে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ওই তরুণী ফখরুলকে এক লাখ টাকা দামের একটি স্মার্টফোন উপহার দেন। তরুণীর দেওয়া স্মার্টফোন দিয়েই তাকে বিপদে ফেলেন ফখরুল। র‌্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম সিলেটভিউকে জানান, ভিডিও কলের মাধ্যমে ফখরুলের সাথে কথা বলতে থাকেন ওই তরুণী। এক ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে ভিডিও কলে ফখরুল ওই তরুণীর নগ্ন ভিডিও রেকর্ড করে রাখেন। পরে সম্পর্কের অবনতি হলে এসব নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তরুণীর কাছে টাকা দাবি করেন ফখরুল। গেল কয়েক মাস ধরে তাকে টাকা দিয়ে আসছিলেন ওই তরুণী।

তিনি আরো জানান, গেল সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ওই তরুণীর বিয়ে হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক তরুণের সাথে। ওই তরুণের বাড়িও বিয়ানীবাজারের আরিশ খাঁ টিলা এলাকায়। বিয়ের পর থেকে তিনি ফখরুলকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ফখরুল অশালীন ভিডিও ওই তরুণীর স্বামী, দেবর, ননদ, ভাই সবার কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর তার ভাই বিয়ানীবাজার থানায় জিডি ও র‌্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে সতর্ক হয়ে যান ফখরুল। তিনি গা ঢাকা দেন। প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান সনাক্ত করে শনিবার বিকালে ফেরিওয়ালার বেশে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্মার্টফোনে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণীর বেশকিছু অশালীন ভিডিও পাওয়া গেছে। র‌্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম সিলেটভিউকে বলেন, ‘ফখরুলের মা ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন। অথচ সে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছিল। আমাদের সবার উচিত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন ও সতর্ক থাকা।’ গ্রেফতারকৃত ফখরুলকে বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে পর্ণোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn