ওয়েছ খছরু-

সিলেটে ধনাঢ্য ব্যক্তির কারণে সংসার ভেঙেছে চাকরিজীবী দম্পতি ভানু সরকার ও লিমন দাস প্রীতির। ধনাঢ্য ওই ব্যক্তির পরকীয়া ও বিয়ের প্রলোভনসহ নানা আশ্বাসে ভেঙে গেছে তাদের সংসার। ভানু ও প্রীতি এখন দুই মেরুর বাসিন্দা। তারা পৃথক মামলা করেছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক সুব্রত নারায়ণ রায় নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ভানুর দায়ের করা মামলায় তার স্ত্রী প্রীতি ও সুব্রত রায়কে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই তদন্ত শেষে ভানুর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া ও বিয়ের প্রলোভনের  নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করে তদন্ত রিপোর্টও জমা দিয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে আবার মামলাটি পুনঃতদন্ত করে অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে রিপোর্ট প্রদান করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। দুই তদন্ত সংস্থার দুই রকম প্রতিবেদন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সিলেট নগরীর লামাবাজার এলাকায় একটি ফিজিও থেরাপি সেন্টারে সহকারী ফিজিও থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করতেন লিমন দাস প্রীতি। স্বামী সংসার নিয়ে থাকতেন নগরীর দাড়িয়াপাড়ায়। স্বামী ভানু সরকার চাকরি করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। চাকরিজীবী দম্পতির সংসার ভালোই চলছিল। ২০১৬ সালের প্রথমদিকে ছন্দপতন ঘটতে শুরু করে তাদের ৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে। তারা উভয়ই এখন অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন নগরীর দাড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা ও বর্তমানে সাগরদিঘীর পাড়ের আপন টাওয়ারে বসবাস কারী সুব্রত নারায়ণ রায়ের দিকে। মামলা ও পারিবারিক সূত্রমতে, ফিজিও থেরাপি দিতে গিয়ে সুব্রত দাসের পরিচয় ঘটে প্রীতির সঙ্গে। এরপর ঘনিষ্ঠতা, ঘুরে বেড়ানো। তাকে বিয়ে ও স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতিও দেন সুব্রত। স্ত্রীর সঙ্গে সুব্রত দাসের পরকীয়ার বিষয়টি এক সময় জেনে যান তার স্বামী ভানু। এ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ ও মনোমালিন্য দেখা হলে স্বামীকে ছেড়ে সন্তান নিয়ে ঘর ছাড়েন প্রীতি। গত বছরের ২৮ অক্টোবর তিনি স্বামী ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান। এমনকি গত ১১ ডিসেম্বর স্বামী ভানু সরকারকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ডিভোর্সও দেন প্রীতি। পরবর্তীতে সুব্রত রায় প্রীতিকে বিয়ে না করা তথা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় আদালতে মামলা করেন প্রীতি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় (নং-২২১/১৭) সুব্রত নারায়ণ রায়ের বিরুদ্ধে তাদের পরিচয়ের সূত্রপাত, ফুসলানো, শারীরিক সম্পর্ক ও বিয়ের প্রতিশ্রতি ভঙ্গের অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করেন সিলেটের সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার তমির হোসেন চৌধুরী। তিনি গত ১৫ই মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি প্রীতির অভিযোগের সত্যতা পাননি বলে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রীতি জানান, প্রবিশন কর্মকর্তা একাধিকবার তাকে বসিয়ে রেখেছেন। নানাভাবে সমঝোতার কথা বলেছেন। তথ্য-প্রমাণ উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে সুব্রত রায়ের পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তিনি ওই প্রতিবেদনে নারাজি দেবেন বলে জানান। এদিকে প্রীতির ঘর ছাড়ার পর প্রীতি ও সুব্রতকে আসামি করে গত বছরই মামলা করেন ভানু সরকার। সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে গত ২৮ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলা নং ১৬৫৭/১৬। মামলায় তিনি তার স্ত্রী প্রীতির বিরুদ্ধে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ঘড় ছাড়ার বর্ণনা দিয়ে সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক জড়িয়ে পড়ার বিবরণ তুলে ধরেন। আদালত মামলটি আমলে নিয়ে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেট জেলাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নিদের্শ দেন। পিবিআই’র এসআই দেবাশীষ তালুকদার মামলাটি তদন্ত করে গত ১লা মার্চ ৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি প্রীতি ও সুব্রত রায়ের বিভিন্ন কথোপকথনের রেকর্ডসহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন। তিনি প্রতিবেদনে প্রীতি সংসারে অমনযোগী হয়ে পড়া, দামি কাপড় পরিধান, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কসহ অভিযোগের (পেনাল কোড ৪৯৭/৪৯৮/৫০৬/৩৪ ধারার অপরাধ) প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে বিবাদীদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪০৬ ও ৩৮০ ধারার অপরাধের কোনো প্রমাণ মিলেনি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের পর তা শুনানি পর্যায়ে থাকাবস্থায় আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য কোতোয়ালি থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। যদিও বাদী তদন্ত প্রতিবেদনের উপর নারাজি দেন। কোতোয়ালি থানারও এসআই আলম পুনঃতদন্ত শেষে গত ১৭ই মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বাদীর অভিযোগ সত্য নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে পিবিআই’র তদন্তকর্মকর্তা দেবাশীষ তালুকদার জানান, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিদেন দিয়েছি। সেখানে মিথ্যাচারের কোনো কিছু নেই। মামলার আইনজীবী নাজমুল হুদা জানিয়েছেন, পিবিআই’র প্রতিবেদন শুনানির কথা ছিল। আদালত আবার তদন্তের জন্য দিয়েছেন। এ নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে রিভিউ করেছি। অভিযোগ প্রসঙ্গে সুব্র্রত নারায়ণ রায় বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn