সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বিস্ফোরকের চালান আসছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে নিয়মিতই বিস্ফোরকের চালান বাংলাদেশে আনছে চোরাকারবারী ও বিস্ফোরক ব্যবসায়ীরা। শক্তিশালী এসব বিস্ফোরক দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, ভারত থেকে আসা এসব বিস্ফোরকের চালান বিভিন্নভাবে হাতবদল হয়ে জঙ্গিদের কাছে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় এসব বিস্ফোরকের চালানের সাথে বাহকরা ধরা পড়লেও চোরাচালানের সাথে সংশ্লিষ্ট মূল হোতারা রয়ে গেছে অধরা। ফলে বন্ধ হচ্ছে না সীমান্ত পথ দিয়ে বিস্ফোরকের চালান আসা।
জানা যায়, ভারত থেকে শক্তিশালী বিস্ফোরক বাংলাদেশে আনতে নিরাপদ রুট হয়ে ওঠেছে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা। সিলেটের জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট প্রভৃতি সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে হাই এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল, ইলেকট্রিক ডেটোনেটরসহ বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক বাংলাদেশে নিয়ে আসে একটি গোষ্ঠী। বিভিন্ন সময় সিলেটের সীমান্ত এলাকা দিয়ে আনা বিস্ফোরকের চালান ধরা পড়ে র‌্যাব, বিজিবির হাতে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এরকম একটি চালান র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে।
র‌্যাব-৯ এর সহকারি পরিচালক এএসপি পিযুষ চন্দ্র দাস জানান, বৃহস্পতিবার জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার করিসেরপুর ব্রিজ এলাকা থেকে কিবরিয়া আহমেদ (২৪) নামের এক যুবককে আটক করা হয়। জৈন্তাপুরের নয়াখেল দক্ষিণের ইজাজুল হকের ছেলে কিবরিয়া সিম্ফনি মোবাইলের বক্সে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক সিলেট নগরীতে নিয়ে আসছিলেন। পেশায় অটোরিকশাচালক কিবরিয়া অটোরিকশাটিও আটক করা হয়েছে। অটোরিকশার পেছনের সিটের নিচ থেকে সিম্ফনি মোবাইলের বক্সের ভেতর ৫০ গ্রাম ওজনের তারসহ ৬ পিস ইলেকট্রনিক ডেটোনেটর ও প্রায় পৌনে ১ কেজি ওজনের ৬ পিস হাই এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত ২৪ জুলাই জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের চতুল বাজার এলাকায় বিস্ফোরকের একটি চালান আটক করে র‌্যাব। ওই চালানে ছিল ৩০টি হাই এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ৩০টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর। ওই সময় র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানান, বিস্ফোরকের চালানটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের লাটুম্বাই কয়লা খনি থেকে এসেছে। কয়লা খনির কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে সীমান্তের দুর্গম এলাকা দিয়ে কয়েকবার হাতবদল হয়ে বিস্ফোরকগুলো বাংলাদেশে আসে। এসব বিস্ফোরকগুলো এতোটাই শক্তিশালী, এগুলো দিয়ে তিনতলা অন্তত তিনটি ভবন উড়িয়ে দেয়া সম্ভব। ওই চালানের বিস্ফোরকের সাথে সিলেটে দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে পাওয়া বিস্ফোরকের মিল রয়েছে বলে জানিয়েছিল র‌্যাব। র‌্যাবের ধারণা, সিলেট সীমান্ত দিয়ে আসা বিস্ফোরক হাতবদল হয়ে জঙ্গি ও নাশকতাকারীদের কাছে চলে যায়। জঙ্গি ও নাশকতাকারীরা সেগুলো কাজে লাগিয়ে তৈরি করে আরো শক্তিশালী বিস্ফোরক।
জানা যায়, সিলেট বিভাগের তিনদিকই ভারতবেষ্টিত। এর মধ্যে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট এবং সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তের ওপারে ভারতের বেশ কয়েকটি কয়লা ও চুনাপাথর খনি রয়েছে। এসব খনি থেকে কয়লা ও পাথর উত্তোলনে শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর ভাঙার পর সেগুলো উপরে তুলে আনা হয়।
সূত্র জানায়, কয়লা ও পাথর খনি থেকে হাই এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ইলেকট্রিক ডেটোনেটর চোরাই পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসে একটি চক্র। সিলেট ও সুনামগঞ্জের একাধিক চক্র এ কাজে সক্রিয় রয়েছে। এসব চক্রের বিভিন্ন সদস্য বিজিবি ও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়াই বাইরেই রয়ে যায় মূলহোতারা।র‌্যাব-৯ অধিনায়ক লে. কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানান, সীমান্ত দিয়ে যাতে কোন বিস্ফোরক ঢুকতে না পারে সেজন্য র‌্যাবের নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। এছাড়া বিস্ফোরক চোরাচালানের সাথে জড়িত পুরো গ্রুপকে আটক করতে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn