মাহবুব আলম ::

প্রায় ৮ মাস ধরে নেতৃত্ব শূন্য রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। একাধিকবার কমিটি গঠনের আভাস পাওয়া গেলেও কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। পূর্ণাঙ্গ বা আহ্বায়ক কমিটি কোনটিই হয়নি গত আট মাসে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের অনৈক্যের কারণে কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না বলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মন্তব্য। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেছেন,‘আওয়ামী লীগের অনৈক্যের কারণে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হচ্ছে না। এই নেতা বললেন, নেতৃবৃন্দের সুপারিশে যারা কমিটি’র নেতৃত্ব পেতে আগ্রহী তাদের বেশিরভাগই সাধারণের কাছে অগ্রহণযোগ্য। এই জন্য কমিটি দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা সকল গ্রুপিং রাজনিতির উর্ধ্বে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে ছাত্রলীগের রাজনীতির চর্চা করে তাদের নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি দিতে চাই । এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে বারবার কমিটি গঠনের ইঙ্গিত দেওয়ার পরও থমকে আছে কমিটির কার্যক্রম। তবে ধৈর্য্যরে অপেক্ষায় উত্তীর্ণ কমিটিতে স্থান পেতে আগ্রহীরা হাল ছাড়ছেন না। কমিটিতে স্থান পেতে অব্যাহত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন পদ প্রত্যাশীরা।

গত ১১ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস.এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কমিটি বিলুপ্তের আট মাস পরও নতুন কমিটি না হওয়ায় অনেকটাই নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি। সম্মেলন না হওয়ায় এ বছরের ১১মার্চ কেন্দ্রীয় কমিটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে। কমিটি বিলুপ্ত করার পর ১৫ মার্চের মধ্যে পদ প্রত্যাশী নেতাদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। এই আহ্বানের পর ছাত্রলীগে নেতৃত্বে আসতে আগ্রহীরা বায়োডাটা পাঠিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অব্যাহত রাখেন তদবির। দুটি পদে প্রায় ৭৫ জনের মত নেতা জীবনবৃন্ত জমা দেন।

এসময় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছিলেন জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাচাই করে দ্রুত কমিটি দেয়া হবে। পরে প্রত্যেক মাসেই নতুন কমিটি দেয়ার তোরজোর শোনা যায়। নতুন কমিটির আশায় পদপ্রত্যাশী নেতারাও গত কয়েক মাস ধরে সুনামগঞ্জ-ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে কমিটি বাতিলের প্রায় ৮ মাস অতিবাহিত হলেও বাতিলকৃত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলার সকল ইউনিটে ছাত্রলীগের কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচী পালিত হওয়ায় বর্তমান কমিটিতে সভাপতি/আহ্বায়ক পদে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এছাড়া সভাপতি সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিব আল হাসান তপু‚ মুক্তাদির আলম আরিফ‚ আরিফ উল আলম‚ বরুণ কান্তি দে‚ জিসান এনায়েত রাজা‚ সাবেক প্রচার সম্পাদক তানজিলুর রহমান‚ সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মনসুর আহমদ‚ সাবেক সহ সম্পাদক নাজমুল হক কিরন, ও সাধারণ সম্পাদক পদে আশিকুর রহমান রিপন‚ ঈসতিয়াক আলম পিয়াল‚ শাহাজুল কাজী রিয়ান‚ সুমিত পুরকাস্থ রাহুল‚ দীপংকর কান্তি দে‚ আবু জাহিদ মোঃ আব্দুল গফফার‚ সুজন দেব‚ ফয়সল আহমদ‚ নুর মোহাম্মদ স্বজন‚ ফয়জুল ইসলাম সুমন‚ মাসকাওয়াথ জামান ইন্তির নামে শুনা যাচ্ছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন নিজেই দেখভাল করছেন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। দীর্ঘদিন তার সঙ্গেই এক ডজনের উপরে পদপ্রত্যাশী সাক্ষাত ও যোগযোযোগ রাখছেন। কমিটির নিজেদের আয়ত্তে আনার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও জাকির হোসাইনের সঙ্গে যোগযোগ রেখেছেন। বড় পদ দুটি বাগিয়ে নিতে জেলার আ’লীগের চারটি বলয় তৎপর রয়েছে। জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট ও আ.লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুলের গ্রুপ দুটি শীর্ষ পদের জন্য মরিয়া। কেউই কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। স্থানীয় নেতাদের নিয়েও বিপাকে পড়েছে কেন্দ্র। এ ব্যাপার ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দারুস সালাম শাকিল বলেন, দেশের ৬৪ জেলার কোথাও কমিটি করতে এতো বেশি সমস্যায় আমরা পড়িনি। এখানে জেলায় যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন, তারা সকলেই নিজের লোককে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দেখতে চান। পদ হচ্ছে দুটি। অথচ. সকলেই তাদের ব্যক্তিগত সমর্থককে চান। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মাঠের রাজনীতি অবিবাহিত সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে বেশি দক্ষ যে তাদেরকেই কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত করবে।

উল্লেখ্য ২০১০ সালে ফজলে রাব্বি স্মরণকে সভাপতি ও রফিক আহমদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এর চার বছর পর ২০১৪ সালে ১২১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn