সুনামগঞ্জ:: সুনামগঞ্জ জেলা সদরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১ টায় জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালিত হয়। সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন এর আয়োজন করে।  এ সময় বক্তারা বলেন, ‘হাওরে শিক্ষার আলো জ্বালাতে প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জ জেলায় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়েছেন। অপরাপর মেগা প্রকল্পের ন্যায়  বিশ্ববিদ্যালয়টিও মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রীর এলাকা শান্তিগঞ্জে স্থাপনের প্রক্রিয়া চএছে। একের পর এক মেগা প্রকল্প শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে শান্তিগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হলে দুই শ বছরে গড়ে ওঠা সুনামগঞ্জ শহর পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে। বক্তারা এই উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি জেলা সদরে স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংগঠনের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক সৈয়দ মহিবুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক অ্যাডভোকেট সভাপতি চান মিয়া, জেলা জাসদ সভাপতি এনামুজ্জামান চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধরণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিন, অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট আব্দুল জলিল, ফজলুল হক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুবের আহমদ অপু, সাবেক প্যবানেল মেয়র মনির উদ্দিন, জাসদ নেতা সালেহীন চৌধুরী প্রমুখ।  পরে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়ে  জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রবিউল লেইছ রোকেশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, হাওর আন্দোলন নেতা রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, সুখেন্দু সেন, আলী নূর, সমাজকর্মী আলী হায়দার, জাপা নেতা রশিদ আহমদ, প্রভাষক ফারুক রশীদ, প্রভাষক আবু সাঈদ, অ্যাভোকেট আলম নূর, অ্যাডভোকেট জাবেদ মোহাম্মদ নূরে আলম, অ্যাডভোকেট মনির মিয়া প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা হিসেবে আপনার নেতৃত্বে দেশব্যাপী যে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, সুনামগঞ্জে উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আমরা তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। যুগের পর যুগ অবহেলিত হাওরাঞ্চলে আপনার বদান্যতায় বর্তমানে উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। সড়ক যোগাযোগ, অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, তার সুফল ভোগ করছেন সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণ। হাওরবাসীর উন্নয়নে সাম্প্রতিক সময়ে আপনি  বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিআরটিএ অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার, যুব মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আপনার দেওয়া সবগুলো মেগা প্রকল্প সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ এলাকা কিংবা তার আশপাশে স্থাপন করা হচ্ছে। শান্তিগঞ্জ এলাকাটি মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রীর বাড়ির পাশে অবস্থিত। সর্বশেষ সুনামগঞ্জবাসীকে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়ে আপনি হওরবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণে পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়টিও শান্তিগঞ্জে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, “একটি জেলায় এতগুলো মেগা প্রকল্প উপহার দেওয়ার পর সঙ্গত কারণেই জেলার মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার কথা। কিন্তু জেলা সদরকে বঞ্চিত করে একটি নির্দিষ্ট এলাকার দুই কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যে সবগুলো প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় জেলার মানুষ ব্যথিত, মর্মাহত।  তাঁরা মনে করছেন, শত বছরে গড়ে ওঠা হাওরের রাজধানীখ্যাত জল-জোছনার ছোট এই শহর সুনামগঞ্জ থেকে যদি একযোগে এতগুলো মেগা প্রকল্প ১৫ কিলোমিটার দূরে চলে যায়, তবে অদূর ভবিষ্যতে এই শহর একটি জনবিচ্ছিন্ন পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে। অথচ ভৌগোলিক দিক থেকে সুনামগঞ্জ শহর জেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। সেইসাথে হাওরের প্রত্যন্ত এলাকার সাথেও সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে জেলা সদরের। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবগুলো মেগা প্রকল্প যদি জেলা সদর কিংবা তার আশপাশে স্থাপিত হয়, তবে এর সুফল পুরো জেলাবাসী ভোগ করার সুযোগ পাবেন।” হাওরবাসীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ সুনামগঞ্জ জেলা সদরে স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা স্মারকলিপিতে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেলা সদরে স্থাপনের দাবিতে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচিতে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ গণমানুষের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে বক্তৃতা দেন।  পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও এই দাবির পক্ষে পথসভা, স্থানীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান, মানববন্ধন, মতবিনিময় ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn