সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। এসব দ্বন্দ্ব কোথাও স্বার্থের, কোথাও নেতৃত্বের আবার কোথাও আধিপত্য বিস্তারের। আগামী নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় দলীয় কোন্দল নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা দল থেকে দূরে সরে গেছেন। সুনামগঞ্জ জেলার দলীয় কোন্দল সহ সারা দেশের কোন্দল মেটাতে চায়  আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় ঐক্যের বিষয়ে সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ঘরে ঐক্য না থাকলে বাইরের ঐক্য কখনো সুদৃঢ় হবে না।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করতে শিগগিরই মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভাগীয় সাংগঠনিক ও যুগ্ম সম্পাদকরা দলীয় কোন্দল থাকা জেলাগুলো সফর করবেন। নির্বাচনের আগেই তারা মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই, যা আছে সেটা মতভেদ বা দূরত্ব। আগামী নির্বাচনের আগে আমরা নেতা-কর্মীদের মতভেদ-দূরত্ব দূর করে সুদৃঢ় দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায়-জেলায় আওয়ামী লীগ নানা দলে-উপদলে বিভক্ত। দলীয় কোন্দলপ্রবণ জেলাগুলোর মধ্যে আছে— চট্টগ্রাম মহানগর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কুমিল্লা উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, খুলনা জেলা, নাটোর, নওগাঁ, বরিশাল মহানগর, ভোলা, পিরোজপুর, এবং মৌলভীবাজার।  এ বছর ৩০ মার্চে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দল বেঁধে মাসব্যাপী চেষ্টা করেও দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারেননি। দলীয় কোন্দলের কারণেই আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা স্বীকার করেছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে কুমিল্লায় জটিলতা আরও বাড়তে পারে বলে নেতারা আশঙ্কা করছেন। সিলেটে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব।

জানা গেছে, দলীয় কোন্দল আছে এমন জেলাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফর করতে পারেন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদকদের দলীয় কোন্দলের বিষয়ে কেন্দ্রে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নেতারা জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, কর্মিসভা এবং মতবিনিময় করে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিরসন করবেন। নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বা মান-অভিমান থাকলে তা নিরসনের চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি  ভোটারদের কাছে সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরবেন নেতারা। এ ছাড়া সন্ত্রাস-জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা চালানো হবে। অভিযোগ আছে, সরকার গঠনের পরই দলের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এমনকি সিনিয়র নেতারা ঢাকামুখী হয়ে পড়েছেন। এলাকায় তাদের যাতায়াত কম। সে কারণে মাঠের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।  আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, কর্মিসভা এবং মতবিনিময় সভা করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করার কাজ চলছে। এটি আরও ব্যাপকভাবে করা হবে। তিনি বলেন, নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলে তার অবসান করা হবে। পাশাপাশি ভোটারদের কাছে সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরা হবে। আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলকে আরও শক্তিশালী এবং গতিশীল করতে তৃণমূলে কর্মিসভা এবং মতবিনিময় সভা করা হবে। ভোটারদের কাছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে। কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn