সেবিকা হতে চেয়েছিলেন দুজনই। ভর্তি হয়েছিলেন সিলেট নার্সিং কলেজে। কলেজটি থেকে এবছর বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁরা। আর এক বছরের অপেক্ষা। কিন্তু  ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা (২০) ও সানজিদা আক্তার (২১)-এর সেবিকা হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ঢাকা যাওয়ার পথে রোববার রাতে কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় এক সাথে নিহত হন দুই বান্ধবী। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচালে ব্রিজ ভেঙ্গে উপবন এক্সপ্রেসের চারটি বগি খালে পড়ে মারা যান চারজন। এদের মধ্যে ইভা এবং সানজিদাও রয়েছেন। নিহত অপর দু’জন হলেন- মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া পৌরসভার টিটিডিসি এরিয়ার বাসিন্দা আব্দুল বারীর স্ত্রী মনোয়ারা পারভীন (৪৮) ও হবিগঞ্জের কাওছার আহমদ (৩২)।  ইভার পরিবার জানিয়েছে, একটি প্রশিক্ষণের জন্য বান্ধবীর সাথে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তিনি। তবে প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কিছু জানে না সিলেট নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ।
নিহত ইভা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জালালপুরের আবদুল্লাহপুর গ্রামের আবদুল বারীর মেয়ে। আর সানজিদা আক্তার বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানার আতজুরি ভানদর খোলা গ্রামের মো. আকরাম মোল্লার মেয়ে। সোমবার দুুপরে ইভার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর সানজিদার পরিবারকে খবর পাঠিয়েছে নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিন ভাই বোনের মধ্যে ইভা সবার ছোট। তাকে অকালে হারিয়ে পরিবারটিতে চলছে শোকেবর মাতম। সোমবার কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে ইভার লাশ নিতে এসেছিলেন তাঁর ভাই ভাই আবদুল হামিদ (৩৫)। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নিতি বলেন, সেবিকা হয়ে মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলো ইভা। তাঁর সে স্বপ্ন আর পুরণ হলো না। তিনি বলেন,  রাত ১০টার দিকে সিলেট রেল স্টেশন ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে মাকে ফোন করে ঢাকা যাওয়ার খবর জানিয়েছে। বান্ধবীর সাথে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় যাওয়ার কথা বলেছিলো। এই আমাদের সাথে তার শেষ কথা।  বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক জানিয়েছেন, ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভার লাশ তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে নিয়ে গেছেন। আর বাগেরহাটের সানজিদা আক্তারের লাশ  কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে। সানজিদার পরিবারকেও খবর পাঠানো হয়েছে।
সিলেট নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, পারিবারিক কাজের কথা বলে ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা রোববার হোস্টেল থেকে ছুটি নিয়ে গিয়েছিলো। আর সানজিদা হোস্টেলে থাকে না। তাই সে ছুটিও নেয়নি। তাদের ঢাকায় যাওয়ার তথ্যও আমাদের কাছে ছিলো না। সোমবার সকালেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এ দু’জন নিহতের খবর পাই। এদিকে, নিহত অপর নারী মনোয়ারা বেগম রোববার রাতে সিলেটে মেয়ের বাসা থেকে উপবনযোগে কুলাউড়ায় নিজ বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় নিজের মেয়ে ও বোনের মেয়েও তাঁর সাথে ছিলেন। দুর্ঘটনায় ট্রেনের জানালার কাঁচ ভেঙে মাথা, মুখ ও বুকে আঘাত প্রান মনোয়ারা। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। তাঁর সাথে থাকা মেয়ে এবং বোনের মেয়েও সামান্য আহত হন। সোমবার সকালে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মনোয়ারা পারভীনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপর নিহত কাওছার আহমেদের মরদেহ স্বজনরা কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সোমবার সকালে হবিগঞ্জ নিয়ে গেছেন।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৬২ জন। এদের মধ্যে ২১ জনকে গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn