মুতাসিম আলী–

স্বাধীনতার পর পর  ১৯৭২ সালে সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক “বিন্দু বিন্দু  রক্তে” র সাথে প্রথম থেকেই জড়িত ছিলাম ।এই সময় আরো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা  প্রকাশিত হলো। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা হাতে পেয়ে আমি অত্যন্ত চমকিত হয়েছিলাম। আকর্ষণীয় গেট আপ মেক আপ , সর্বোপরি বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য ।  সপ্তাহের স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ ছাড়াও ছিল আলোচনা সমালোচনামূলক  কলামে ছিল সমৃদ্ধ পত্রিকাটি। সম্পাদক ছিলেন মুহাম্মদ আবদুল হাই আর কার্যনির্বাহী সম্পাদক  গৌরাঙ্গ দাস  ।

”সূর্যের দেশ”-এ  চলমান ঘটনার উপর সরস মন্তব্য সহকারে লেখা “তাল বেতাল”  শিরোনামে  কলামটির কথা এখনো মনে পড়ে। তখন উকিল পাড়ার পরিত্যক্ত যে বাড়িতে  অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয় সেখান থেকে একটি ড্রেসিং টেবিল গায়েব হয়ে যায় । ছোট করে  খবরটি দিয়ে এব্যাপারে মন্তব্য করা হয়  –” ড্রেসিং টেবিলটি কোথায় কার মনোরঞ্জনের জন্য চলে গেছে কে জানে । ” যে বাড়িতে টেবিলটি স্থানান্তরিত হয়েছিল বলে জানা যায় সেই বাড়ির মালিকের নামের  প্রতি ইঙ্গিত করেই মন্তব্যটি করা হয়। সরাসরি না বললেও সবাই বুঝে গেল কোথায় কি ঘটেছে । এছাড়া স্যারের লেখা কলামগুলিও ছিল খুবই ধারালো । তার প্রগাঢ ব্যক্তিত্বের  ছাপ ছিল প্রতিটি লেখায় ।

”বিন্দু বিন্দু রক্তে”র   কার্য্নির্বাহী সম্পাদক আবু আলী ভাই এক পর্যায়ে সুনামগঞ্জ থেকে  ঢাকা চলে   যান ল’ পড়া শেষ করতে । কিছুদিন পর  চিঠি আসে সেখানে তিনি  আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত ” জয়বাংলা” পত্রিকায়  কাজ পেয়েছেন। আমি গেলে আমাকেও কোন একটি কাগজে ঢুকিয়ে দিতে পারবেন। আমি তখন ”বিন্দু বিন্দু রক্তে”র   সম্পাদক রব্বানী ভাইকে অনেক বলে কয়ে ঢাকায় যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। সুতরাং তার্ যেখানে কোন ব্যবস্থা নাই, আমার আর কি ব্যবস্থা করবেন। সুতরাং আবার সুনামগঞ্জে ফেরত এলাম। এসে দেখলাম ”বিন্দু বিন্দু রক্তে”   নতুন কয়েক জন কাজ করছে। আমি আর সেখানে ফিরতে উৎসাহ বোধ করলাম না। এই সময় একদিন  আশুতোষ ভৌমিক আমাকে নিয়ে  আবদুল হাই   স্যারের মুর্শেদী প্রেসে গেল । আশুতোষ কিশোরগেঞ্জের ছেলে।  ভালো কবিতা লিখতো। ভারতের বালাটে  শরণার্থী  ছিল। এসময়  কিশোরগঞ্জসহ অন্যান্য কয়েকটি জেলারও বেশকিছু শরণার্থী  সুনামগঞ্জে এসে উঠেছিল।   যারা বাড়িতে যাওয়ার আগে পর্য্ন্ত সুনামগঞ্জের বিডি হলসহ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে ছিল। আশুতোষের সাথে স্যারের পরিচয় কিভাবে  হয় জানিনা। সে স্যারের সাথে ”বিগত প্রচ্ছদে” নামে  দেশের প্রখ্যাত কবিদের কবিতা নিয়ে একটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছিল। ” বিন্দু বিন্দু রক্তে” অফিসে সে প্রায়ই আসতো এবং আমার সাথে বেশ সখ্য গড়ে উঠেছিল। স্যারের সাথে ব্যক্তিগতভাবে  তখনো আমার পরিচয় ছিল না। আশুতোষ আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। আমি “ বিন্দেু বিন্দু রক্তে”তে না্ই  শোনে বললেন  ইচ্ছে হলে “সূর্যের দেশ”-এ  কাজ করতে পারি। সেই থেকে  “সূর্যের দেশ”-এ কাজ  শুরু ।

“সূর্যের দেশ”-এ  তখন গৌরাঙ্গ দাসও নিয়মিত আসেন না। আমাকেই অধিকাংশ কাজ করতে হতো । নিউজ লেখা, সাহিত্য বিষয়ক লেখাগুলো দেখা, মাঝে মাঝে  দু’একটি কলাম লেখা ইত্যাদি। স্যারের নির্দেশনা ও পরামর্শে বেশ কিছু কলাম তখন আমি লিখেছি । তবে সেসব লেখার বেশিরভাই ছিল ছদ্মনামে। যেমন ’কোরক রায়’, ’বিরূপাক্ষ’ ইত্যাদি নামে। এরকম একটি লেখা ছিল লাউড়ের গড়ের ইতিহাস ভিত্তিক । একদিন লাউড়ের গড়ের  উপর সরকারী জরীপের একটি ইংরেজী পেপার আমার হাতে দিয়ে স্যার বললেন  এর উপর ভিত্তি করে একটি লেখা তৈরি করতে হবে। আর কিছু  বললেন না। আমি তখন মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছি। কষ্টে-সৃষ্টে  ইংরেজী পেপারটি পড়ে লেখটি তৈরি করলাম।  স্যার কিছু কারেকশন করে লেখাটি ছাপিয়ে দেন।

  তখনকার  মন্ত্রী  আবদুস সামাদ আজাদ একবার সুনামগঞ্জ এলেন। সম্ভবত  তখন তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন।  স্যার একপ্রস্থ প্রশ্ন পত্র দিয়ে বললেন, সামাদ সাহেবের  সাক্ষাতকার নিয়ে আসো। আমি দুরু দুরু বুক নিয়ে  জেলা পরিষদ মিলনায়তনে গেলাম , যেখানে সামাদ সাহেব উঠেছেন। সেক্রেটারিকে বলে  সামাদ সাহেবের সাথে দেখা করলাম। আবদুল হাই সাহেব পাঠিয়েছেন শুনে তাঁর খোঁজ খবর নিলেন । তারপর  প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ এবং সংক্ষেপে দিলেন । আমি নোট করে নিয়ে এলাম । তখন সুনামগঞ্জের এস.ডি.ও. ( মহকুমা প্রশাসক ) ছিলেন  কমল ভট্ট চৌধুরী । তার ছেলে কপোত-এর জন্মদিন উপলক্ষে স্যারকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।  স্যার আমাকে বললেন, কপোতের জন্ম দিনে অন্যরকম একটি উপহার দেবো। মুতাসিম, একটা কবিতা লিখে দিও তো।

আমি লিখলাম । দুটা লাইন এখনো মনে আছে —

 “ কপোত উড়ুক, কপোত উড়ুক সুনীল আকাশ ’পরে,

  কপোত কপোত উড়ুক সবার হৃদয় জুড়ে”।

কবিতাটি পুরো  এক পৃষ্ঠা  ভরে  লেখা । স্যার এটি সুন্দর করে বিভিন্ন রঙের কালি  দিয়ে রঙিন কাগজে  ছাপালেন। অনেকগুলো কপি করলেন।  একটি কপি ফ্রেমে বাঁধিয়ে আমাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন এসডিও সাহেবের বাসায়। স্যার সব সময় তাগিদ দিতেন পড়াশোনার বিষয়ে । বলতেন লেখক হতে হলে তোমাকে বেশি বেশি পড়তে হবে।  তার বাসায় ছিল বইয়ের বিশাল ভান্ডার। কারো ব্যক্তিগত সংগ্রহে এত বই  আমি আর কারো বাড়িতে দেখিনি। তিনি বলতেন, প্রবন্ধ লিখতে গেলে তো বটেই , কবিতা লিখতে হলেও পড়াশোনার বিকল্প নাই। ব্যক্তি চেতনা সামাজিক চেতনা আর ঐতিহ্যিক চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে আবেগকে যতই জারিত করবে ততই সাহিত্যের সার্থ্কতা। আমি ক্লাস এইটে পড়ার সময় আমার আরেক পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুর রহীম স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। একদিন  দেখলাম সাইকেলে করে এক ভদ্রলোক স্যারের  কাছে এসেছেন। পরে জেনেছিলাম ইনি হলেন আবদুল হাই সাহেব । তার কাছে এসেছিলেন কবি আছদ আলী পীরের বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে। শাহ আছদ আলী পীর আঠারো শতকের একজন কবি, সুনামগঞ্জের ষোলঘরে জন্ম । “শহর চরিত” , ”এবাদতে মগজ”সহ তার লেখা বেশ কয়েকটি পুঁথি রয়েছে। এগুলি সিলেটী নাগরীতে লেখা ।

সুনামগঞ্জের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিষয়ে স্যারের ছিল গভীর অনুসন্ধিৎসা । সম্ভবত: ১৯৬৯ সালে সুনামগঞ্জে ”হাছন নগর স্কাউট জাম্বুরী” নামে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্কাউট জাম্বুরী অনুষ্ঠিত হয়। এ্‌উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় “সুনামগঞ্জ পরিচিতি” নামে আবদুল হাই স্যারের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটি সুনামগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য  সম্পর্কে এত তথ্য সমৃদ্ধ ছিল যে এথেকে  ধারণা করা যায় স্যারের জ্ঞান ও গবেষণা কত গভীর ছিল। স্বাধীনতার পর সুনামগঞ্জের প্রথম যে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ( সালটি মনে করতে পারছি না) স্যার সিদ্ধান্ত  নিলেন   চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অন্য প্রার্থী হলেন ওবায়দুর রেজা চৌধুরী ।  একদিন আমাকে স্যার বললেন তার বাড়িতে যেতে হবে।  বাড়িতে গিয়ে জানলাম একটা  পরিচিতি পুস্তিকা প্রস্তুত করতে হবে তার জীবনের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে । তথ্যগুলো ঐদিনই আমি নোট করে নিয়ে এলাম । এগুলোর উপর ভিত্তি করে পরিচিতিমূলক রচনাটি তৈরি করলাম  । এটি পুস্তিকারে  ছাপিয়ে সুনামগঞ্জ শহরে বিতরণ করা হলো। স্যারের জন্য নির্বাচনে আমরা দিনরাত খাটাখাটনি করলাম। কিন্তু স্যার পাশ করতে পারলেন না।

১৯৭৩ সালে পড়াশোনার জন্য আমি ঢাকায় চলে আসি । তখন স্যার  আমাকে ”সূর্যের দেশ”-এর পেডে নিজ হাতে লিখে একটি   প্রশংসা পত্র দিয়েছিলেন। তখন ফটো কপি করার ব্যবস্থা তখন ছিলনা । থাকলে এটি আমি আজীবন সংরক্ষণ করতাম। ঢাকায় ”সাপ্তাহিক পদক্ষেপে” কাজ নেয়ার সময় আমি এটি জমা দিয়েছিলাম। “পদক্ষেপ “ পত্রিকায় চাকুরির ব্যাপারে আরো একজনের  উল্লেখ না করলেই নয় তিনি হলেন তখনকার ছাত্রলীগ নেতা নূরুজ্জামান চৌধুরী শাহী। শাহী ভাই তখন ঢাকায় ছিলেন। তিনিই আমাকে  পত্রিকা প্রকাশক এস এম ইউসুফর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।

”পদক্ষেপে” কাজ করার সময় বেশ  ‍কিছুদিনের  ছুটি নিয়ে  জন্য সুনামগঞ্জ গিয়েছিলাম । ২৫ বৈশাখ  ছিল সামনে । স্যারে সাথে কথা হলো রবীন্দ্রজয়ন্তী করার। কয়েকজন বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে সিদ্ধান্ত হলো রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে। উদ্যোক্ত হিসাবে থাকবে “ আমরা কতিপয় তরুণ সাহিত্য সেবী”। নামটা মূলত অনুষ্ঠানকে সামনে রেখেই ঠিক করা হয়েছিল । অনুষ্ঠান হলো। স্যার ছিলেন প্রধান অতিথি । তিনি প্রস্তাব করলেন – এটিকে একটি সংগঠনে রূপ দেয়া হোক।  তরুণ সাহিত্যামোদীরাও এতে উৎসাহ বোধ করলেন । আমরা তাকে সভাপতি হওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। কিন্তু  তিনি   সভায় উপস্থিত অধ্যাপক আহমদ  আলী সাহেবকে সভাপতি  করার জন্য বললেন। হাসতে হাসতে বললেন, তিনি থাকবেন উপদেষ্টা – যেটা হলো সব চেয়ে কম চেষ্টার কাজ। সেই থেকে সুনামগঞ্জে “আমরা কতিপয় তরুণ সাহিত্য সেবী”র যাত্রা শুরু ।

স্যারের প্রতিভার সৌরভ রাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা সকল ক্ষেত্রেই  ছড়িয়ে ছিল । আমি তার জীবনের কর্ম্ধারাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করি।  এর মধ্যে পঞ্চাশের দশকটি ছিল তার জীবনে প্রধানত:  সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে থাকার সময়। জেল খেটেছেন । জেল থেকে বিএ পাশ  করেছেন। তুখোর মেধার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সরকারী চাকরি-বাকরির ধান্দা করেননি। এসময়ের স্মৃতিচারণ করতে  গিয়ে তখনকার সুনামগঞ্জের অন্যমত ছাত্রনেতা গুলজার আহমদ বলেছেন,  “ আমি যখন সুনামগঞ্জে এলাম তখন এখানকার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা ছিল খুব দুর্বল। যে কয়েকজন আওয়ামী লীগ করতেন তারা হলেন আকমল আলী মোক্তার, আহাদ চৌধুরী মোক্তার, তৈফুর মিয়া প্রমুখ । বাকী যারা রাজনীতে সরব ও সক্রিয় ছিলেন, তারা হলেন , যেমন মুহাম্মদ আবদুল হা্ই, আবদুল হক, আলফাত উদ্দিন,যোগেন্দ্র শর্মা,  আজহার মিয়া সকলেই গণতন্ত্র দল করতেন। …………….. এদের আড্ডা জমতো  ’সুনামগঞ্জ ডেইরীতে ‘ ।  ’সুনামগঞ্জ ডেইরী’ ছিল তখন সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক আড্ডার প্রধান কেন্দ্র” *।

এসময় তিনি তার রাজনৈতিক চেতনার প্রেরণা থেকেই   সাপ্তাহিক পত্রিকা ”দেশের দাবী” প্রকাশ করেন, সেটি  ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্য্ন্ত  প্রকাশিত হয়। তবে পরবর্তীতে রাজনীতি থেকে তিনি অনেকটা সরে আসেন। ষাট ও সত্তরের দশক ছিল তার জীবনে শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার বহুমুখী কাজের  এক  কর্মময় সময়।   উজানীগাও , পরে এইচ এমপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।   আর্ট্স  কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন । প্রায় প্রতি বছর সুনামগঞ্জে হাছন রাজার মেলা, সাহিত্য-সংস্কৃতির উৎসবসহ বিভিন্ন সাহিত্য সাংস্কৃতিক আসরের আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা  ছিলেন তিনি। শাহ আবদুল করিম, দূরবিন শাহ, বাউল কামালসহ অনেক স্থানীয় পর্যায়ের এবং উস্তাদ ফজলুল হক, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী,দেওয়ান মোহম্মদ আজরফ, মোস্তফা জামান আব্বাসী, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ অনেক জাতীয় পর্যায়ের  সঙ্গীত শিল্পী,  সাহিত্যিক-সাংবাদিক এ্সব সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে  সুনামগঞ্জ আসেন।

 ’সুরমা’ পত্রিকার (প্রথমে মাসিক , পরে পাক্ষিক ) সম্পাদনা, অর্ধ্ সাপ্তাহিক ’দেশের কথা’ , সাপ্তাহিক ‘সূর্যের দেশ’ সম্পাদনা ও প্রকাশনা   এই দু দশকের তার কাজের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । সত্তর দশকের শেষের দিকে তিনি ঢাকা থেকে  পত্রিকা প্রকাশের  উদ্দেশ্যে ঢাকায় চলে যান । ঢাকায় এসে হোটেলে থাকেন আর ঢাকার বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের সাথে  যোগাযোগ  করেন । অনেককে হোটেলে  এনে আপ্যায়িত করেন। এসময় আশুতোষ ভৌমিক এদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে সহযোগিতা করে।  বেশ কয়েক মাস সেখানে অবস্থান করেন । কিন্তু  টাকা পয়সা অনেক খরচ হলেও  যে উদ্দেশ্যে  ঢাকা গেলেন তাতে কোন সফলতা  না আসায় আবার সুনামগঞ্জ ফিরে আসেন।

শেষ জীবনে তিনি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন ।  জীবনযাপন এবং তাঁর রচিত বেশ কিছু গানে এর প্রতিফলন রয়েছে । ”হাছন পছন্দ” নামে অনেক গান তিনি রচনা করেন এ্ই সময় । যা  প্রকাশিত  হয়েছে “উত্তাল তরঙ্গে” ও ”উতলা বাতাসে “ নামে তাঁর দুটি গানের  বইয়ে। সংগৃহীত রাধারমণের গান  “ভা্ইবে রাধা রমণ বলে” এবং দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরীর গান ”গণী সঙ্গীত” নামে  আরো দুটি গানের বই তাঁর সম্পাদনায়  এ্ই সময় প্রকাশিত হয়।

সুনামগঞ্জ শহরের আরপিন নগরে স্যারের বাড়ির কাছেই আমার নানার বাড়ি । আমার মামা তখনকার নামকরা ফুটবলার সমশের মিয়া স্যারকে  বড় ভাই এর মতো দেখতেন । আমার মেঝো  ভাই মোদাব্বির আলী  নাটক করতেন। তিনি স্যারের সাথে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন । তিনিও স্যারকে খুব্ শ্রদ্ধা করতেন।   আম্মা তার বাপের বাড়ির এলাকার  ’তালুকদার বাড়ি’র ছেলে  হিসাবে তাকে তার ডাক নাম ”গোলাপ মিয়া” হিসাবে  চিনতেন। এ্ই গোলাপের সৌরভের ছোঁয়া আমিও কিছুটা পেয়েছি যা  এখনো আমাকে মোহিত করে।

 

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn