উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার বাড়লেও গত ছয় বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে কমসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এবার সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭শ’ জন। গত বছরও এইচএসসিত জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ছিলো এবছরের প্রায় দিগুণ; ১৩৩০ জন। জিপিএ-৫ এর এই পতনের পেছনে হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যারও প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, বোর্ডের ৭০০ জনের মধ্যে সিলেট জেলারই ৬০৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা। এই দুই জেলার মাত্র দশজন করে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত মার্চ-এপ্রিলের অকাল বন্যায় এই দুই জেলাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ফসলহানির কারণে এই দুই জেলার অনেক শিক্ষার্থী ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি। এর প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। সিলেট বোর্ডের অপর জেলা হবিগঞ্জের ৭৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

গত মার্চ-এপ্রিলে হাওরাঞ্চলে দেখা দেয় অকাল বন্যা। এতে তলিয়ে যায় হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান। অকাল বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। হাওড় এলাকায় দেখা দেয় মানবিক বিপর্যয়। এর প্রভাব পড়ে শিক্ষাখাতেও। স্কুল-কলেজগুলোতে কমে যায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি। ঝড়েও পড়ে অনেকে। বন্যা চলাকালীন সময়েই শুরু হয় এইচএসসি পরীক্ষা। ফলে হাওর এলাকার পরীক্ষার্থীরাও পড়ে বিপাকে। বৈরি পরিস্থিতেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় তাদের।

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিলেট বোর্ডে ২০১২ সালে ২ হাজার ৬৫ জন, ২০১৩ সালে ১৫৩৫ জন, ২০১৪ সালে ২ হাজার ৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৩৫৬ জন এবং ২০১৬ সালে ১৩৩০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এলেও এবার বেড়েছে পাসের হার। এবছর সিলেটে ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। যা গতবছর ছিলো ৬৮.৫৯ শতাংশ। এবছর ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪৬ হাজার ৭শ’ ৯৭জন।  তবে পাসের হারও নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই পাসের হারও সুখকর নয়। প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী এবছর অকৃতকার্য হয়েছে।

বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার জন্য ইংরেজি বিষয়ে দূর্বলতাই প্রধানত দায়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি।  শামসুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের ইংরেজি ভীতি আছে। তাছাড়া ইংরেজি বিষয়ে মানসম্মত শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে আমাদের। ফলে এবার অনেকেই খারাপ করেছে। প্রায় ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী এবছর ইংরেজি বিষয়ে ফেল করেছে। এছাড়া আইসিটি, উচ্চতর গণিত বিষয়েও অনেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এসবের কারণেও পাসের হার কমেছে।

এমন ফলাফলে হতাশা প্রকাশ করে সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, এখন সবক্ষেত্রেই প্রতিযোগীতা বাড়ছে। ভালো ফলাফল না করলে তরুণ প্রজন্ম এই প্রতিযোগীতায় টিকতে পারবে না। তিনি এই ফলাফল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, কেনো এতো খারাপ হলো বুঝতে পারছি না। ফলাফলে কোনো ত্রুটি আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে হবে।  এ ব্যাপারে শিক্ষাবোর্ডের দেওয়া যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।  সিলেট বোর্ডের এবারের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবারও ভালো করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৮৩.৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬০৪ জন।  মানবিক বিবঅগ থেকে পাস করেছে ৬৭.৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ জন। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৭৭.৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ন হয় ও ৭০ জন জিপিএ-৫ পায়। এবছর সিলেট বোর্ডে শতভাগ পাস করেছে ৮ টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতবছর এ সংখ্যা ছিলো ৫।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn