তপন কুমার দাস-

বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরপাড়ের চার ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার পানিবন্দি মানুষের এবারের ঈদ কেটেছে নিরানন্দে। তবে চারটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া গৃহহীন অর্ধ শতাধিক দুর্গত পরিবারের মাঝে ঈদের দিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের দিন বড়লেখার একটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আছে দশ বছরের শিশু রাসেদা বেগম। ঈদে মায়ের কাছে নতুন জামার আব্দার করেছিল। কিন্তু জামা না পেয়ে সে অনেক কান্নাকাটি করছিলো। নতুন জামা কেনার আর্থিক সামর্থ নেই তার পরিবারের, সেটা যেন কোন কিছুতেই তাকে বোঝানো যাচ্ছিল না। মা তাকে বারবার বৃথা সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। তবে মেয়েটির কান্না কিছুতেই যেন থামছিলো না।

সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে হাওরে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি তাদের ঘর-বাড়ি ডুবিয়ে দেয়। রাসেদাদের বাড়ি সুজানগর ইউনিয়নের ভোলারকান্দি গ্রামে। এলাকার অন্য সব পরিবারগুলোর মত রাসেদার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে ছিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে।মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ নানা আয়োজনে পালন করছেন দেশবাসী, নতুন নতুন পোশাক পরে ঈদের নামাজের পরে নানা আয়োজনে তাদের দিন কেটেছে। কিন্তু বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গত বড়লেখার ৫২টি পরিবারে ঈদের কোন আনন্দই ছুঁতে পারেনি। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত পরিবারগুলোর মধ্যে মুসলমান ৫২টি পরিবারের অধিকাংশ সদস্যেরই এ ঈদে ছিল না নতুন পোশাক। পুরাতন কাপড়ে নিরানন্দ ঈদ কেটেছে গৃহহীন এসব মানুষের।

সুজানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া বন্যা দুর্গত পরিবারগুলো ঈদের আগের রাতে জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপির ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য, পোষাক ও ঈদের সকালে প্রশাসনের উদ্যোগে খাবার বিতরণ ছাড়া আর কোন সাহায্য পায়নি।

সুজানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে কথা হয় ভোলারকান্দি গ্রামের জয়তুন বেগমের সাথে। তিনি বলেন, “বেপানায় (বিপদে) পড়িয়া আইছি। পানিতে বাড়ি-ঘর ভাসাইয়া (ভাসিয়ে) লইয়া গেছে। মাইনষে (মানুষে) বাড়িত ঈদ করের (করছে) আর আমরা এই স্কুলে আছি কোনোমতে। বাড়ি ছাড়া ঈদ করলে তো মনে শান্তি মিলে না। মনে শান্তি নাই বাবা।” একই আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা তাজিরুন বেগম বলেন, “ঈদে বাচ্চাদের কিছু কিনে দিতে পারিনি। ভাসিয়া আইছি। ঈদের আগের রাইত (রাতে) হুইপ সাহেব (হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপি) লুঙ্গি, টাকা, সেমাই, চিনি অতা দিছইন। আর কোনতা পাইছি না। পুরান কাপড়ে ঈদ করিয়ার। পুরান কাপড়ে ঈদের আনন্দ পাওয়া যায় না।”

সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত। রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। প্রায় দেড়মাস ধরে এসব মানুষ পানির সাথে যুদ্ধ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁর ইউনিয়নের কোন মানুষের মধ্যেই এবার ঈদের আনন্দ বিরাজ করেনি। উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর জানান, হাকালুকি হাওরপাড়ের সুজানগর, তালিমপুর, বর্নি, দাসেরবাজার ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বন্যায় মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্য অনুযায়ী দুর্গত মানুষকে সাহায্য দেয়া হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn