মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন তিনি। তবে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও নিয়মিত তোলা হচ্ছে তার বেতন-ভাতা। আর এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। মনিরুল ইসলাম কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার উত্তর মিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। প্রভাবশালী বলেই তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলামের আপন চাচাতো ভাই। কমিটির রেজুলেশনে চিকিৎসা ও অর্জিত ছুটি দেখিয়ে তিনি সাড়ে তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। এরপরও তার নামে বেতন হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্জিত ছুটি নেন মনিরুল ইসলাম। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি নেন। এরপর ২০১৯ সালের ১২ মার্চ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন এ প্রধান শিক্ষক। একই বছরের ১৫ জুন থেকে এ পর্যন্ত মেডিকেল ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে মনিরুল ইসলাম সেখানে থেকেই নিয়মিত বেতন তুলছেন।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মুছার স্বাক্ষরিত বেতন শিট কুষ্টিয়া এসএস রোডের রূপালী ব্যাংক শাখায় পাঠানো হয়। আর সেই ব্যাংক থেকে বেতনের টাকা প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এ ব্যাপারে উত্তর মিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহিবুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম মেডিকেল ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মুছার স্বাক্ষরিত বেতন শিটের বলে প্রধান শিক্ষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত বেতনের টাকা জমা হয়। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিজ ক্ষমতার বলে প্রধান শিক্ষকের বেতন শিটে স্বাক্ষর করেন। বিদ্যালয়ের অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তিনি বিদেশে থাকার কারণে ২০০ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকট। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মুছা বলেন, আমি ১৭ মাস আগে থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। প্রতি মাসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামসহ সব শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন শিটে স্বাক্ষর করে দেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম সাড়ে তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই নিয়মিত বেতন তুলছেন। আমি জানি তিনি ছুটিতে আছেন।

প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামের মা মরিয়ম বেগম বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান আমার ছেলে মনিরুল ইসলাম। তারা সেখানেই থাকছেন। আমার ছেলে সেখানকার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। মরিয়ম বেগম আরো বলেন, মনিরুল ইসলামের চাচাতো ভাই মিজানুর রহমান মুছা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। মুছাই বেতন তোলার ব্যবস্থা করে দেন। প্রতি মাসে ছেলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা জমা হয়। কুমারখালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, উত্তর মিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। আমরা তদন্ত করে দেখব। নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn