ব্রিটেনের উত্তর লন্ডনে একটি মসজিদের কাছে ভ্যান গাড়িচাপায় একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আটজন। হতাহতরা মসজিদ ছেড়ে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশ এটিকে একটি ‘বড় ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। রোববার দিবাগত রাতে ফিনসবারি পার্ক মসজিদের কাছে সেভেন সিস্টার্স রোডে এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। সান পত্রিকা তাদের খবরে বলেছে, এ ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছে। তবে তাদের খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, ব্রিটেনের গ্রীষ্মকালীন সময় রাত ১২টা ২০ মিনিটে তাদের খবর দেওয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে তারা রয়েছে।

দ্য মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) দাবি করেছে, ওই ভ্যান গাড়িটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ মুসলমানদের ওপর তুলে দেওয়া হয়। রয়টার্স জানায়, ভ্যানচাপার শিকার অধিকাংশ ব্যক্তি এশার নামাজ শেষে ফিরছিলেন। লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সহায়তা পাঠিয়েছে।

লন্ডন হামলায় নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশি

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে একটি মসজিদের কাছে তারাবির নামাজ-ফেরত ব্যক্তিদের ওপর ভ্যান উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তি একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। তবে তাঁর নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশিত হয়নি। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে দ্য টেলিগ্রাফ এ তথ্য জানিয়েছে। উত্তর লন্ডনের সেভেন সিস্টারস রোডের ফিন্সবারি পার্ক মসজিদের কাছে রোববার এই হামলা হয়। এতে একজন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়। নিহত ওই ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।

সুলতান আহমেদ নামের লন্ডনে জনকল্যাণে নিযুক্ত এক কর্মী জানিয়েছেন, তাঁর চাচাও ঘটনাস্থলে ছিলেন। মসজিদ ছাড়ার পর তাঁর চাচার চোখের সামনেই ভ্যানটি মুসল্লিদের ওপর উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে প্রবীণ ওই বাংলাদেশি মারা যান। ফিন্সবারি হলো ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল এবং প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের নির্বাচনী এলাকা। হামলাকারীরা পালাবার সময় উপস্থিত জনতার হাতে আটক হন। পরে পুলিশ এসে একজনকে গ্রেপ্তার করে। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। বিষয়টি তাঁরা তদন্ত করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে হামলাকারী গাড়িতে তিন ব্যক্তি ছিলেন, অন্য দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

তিনজন ব্যক্তি হামলাকারীকে আটক করেছিলেন। তাঁদের একজন মোহাম্মদ বলেন, আটকের পর স্থানীয় ইমামের ভূমিকা ছিল প্রশংসাজনক। তিনি রোজার মাসে সবাইকে সংযম ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে হামলাকারীর কোনো ক্ষতি করা থেকে অন্যদের বিরত করেন। পরে পুলিশ এসে সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় এক ক্যাফের মালিক ২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, ‘ওই ইমামের কারণেই হামলাকারী লোকটি এখনো জীবিত আছে।’ দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে ওই ইমামের নাম মোহাম্মদ মাহমুদ। ফিন্সবারি পার্কের মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউসের নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম মাহমুদের প্রশংসা করে বলেন, তাঁর কারণেই হামলার পরের পরিস্থিতি শান্ত করা গেছে এবং সম্ভাব্য জীবননাশের ঘটনা এড়ানো গেছে।

জেরেমি করবিন হামলার পরপরই তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দলের এই নেতা বলেন, ‘আমি একে অন্যান্য হামলার মতোই অতীব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি’। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এক বিবৃতিতে নিহতের জন্য শোক প্রকাশের পাশাপাশি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ঘটনার পর অনলাইনে পোস্ট হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। লোকজন ছোটাছুটি করছে। আহত ব্যক্তিদের সহায়তায় মানুষ এগিয়ে আসছে। সেভেন সিস্টারস রোডের একটি ফ্ল্যাট বাস করা এক নারীর ভাষ্য, লোকজনকে তিনি চিৎকার ও আর্তনাদ করতে দেখেছেন। একটি ভ্যান লোকজনের ওপর উঠে যাচ্ছে বলে সবাই চিৎকার করে বলছিল। মসজিদের বাইরে একটি সাদা ভ্যান থেমে ছিল। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা লোকজনকে ভ্যানটি আঘাত করছিল বলে মনে হয়।

হামলাকে ‘গুরুতর ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছে লন্ডন পুলিশ। তারা বলছে, রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের খবর দেওয়া হয়। জানানো হয়, একটি ভ্যান মুসল্লিদের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিরা নামাজ শেষ মসজিদ থেকে বেরিয়েছিলেন। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) বলেছে, মুসল্লিদের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি ভ্যান তুলে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি যুক্তরাজ্যের মসজিদ ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দাবি করেছে। স্থানীয়রা বলেছেন, এলাকাটিতে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিয়ে তাঁরা গর্বিত ছিলেন। কিন্তু এখন মুসলমানদের মধ্যে ভীতি জন্মাতে দেখা যাচ্ছে।

‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাই’

একের পর এক হামলা ও বহুতল গ্রিনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর আবারও হামলার শিকার হয়েছে লন্ডন। সম্প্রতি লন্ডন ব্রিজে গাড়িচাপা দিয়ে যেভাবে মানুষ মারার চেষ্টা করা হয়েছিল, এবারের ঘটনাও তেমন। তবে এবার হামলা হয়েছে শুধু মুসলিমদের ওপর। হামলায় গাড়িচাপায় নিহত হয়েছেন এক মুসল্লি।  রোববার (১৮ জুন) দিবাগত রাতে নামাজ আদায় শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা মুসল্লিদের ওপর গাড়ি তুলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় হামলাকারী গাড়িচালক চিৎকার করে বলছিলো, “আমি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাই।”

রোববার রাতে উত্তর লন্ডনের ফিনসবারি পার্ক মসজিদের কাছে সেভেন সিস্টার্স রোডে দুটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা মুসল্লিদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে হামলাকারী ওই চালক। এ ঘটনায় একজন নিহত ও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় হতাহত সবাই মুসলিম। ৪৮ বছর বয়সি সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল রহমান বিবিসিকে বলেছেন, তিনি লোকটিকে (গাড়িচালক) আঘাত করেন এবং যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য অন্যদের সঙ্গে তাকে জাপটে ধরেন। যখন লোকটি তার ভ্যান গাড়ি থেকে নেমে এলেন, তখন তিনি পালিয়ে যেতে চাইছিলেন, দৌড় দেয়ার সময় বলছিলেন, “আমি সব মুসলিমকে হত্যা করতে চাই… আমি সব মুসলিমকে খুন করতে চাই।” রহমান বলেন, “আমি তাকে পেটে আঘাত করি। তারপর আমি ও অন্যরা মিলে তাকে মাটির সঙ্গে চেপে ধরি, যাতে তিনি নড়াচড়া করতে না পারেন। পুলিশ আসা পর্যন্ত আমরা তাকে ধরে রাখি।”
মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি সহকারী কমিশনার নিল বসু জানান, “সন্ত্রাসী হামলা তখনই শুরু হয়, যখন গাড়িচালক পথচারীদের ওপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দেয়। যারা আহত-নিহত হয়েছেন, তারা সবাই মুসলিম। আপাতত গাড়িচালক ছাড়া এ ঘটনার জন্য আর কোনো সন্দেহভাজন নেই।” ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, একে পুলিশ ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’ হিসেবে দেখছে। এর তদন্ত ভার পড়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ওপর। এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিরোধী নেতা করবিন ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। সাদিক খান বলেছেন, রোজাদাররা যেন শঙ্কিত না হন, সে কথা ভেবে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আটক হামলাকারীর নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি পুলিশ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn