ছাতক প্রেসক্লাবের দ্বন্দ্বের জের ধরেই দৈনিক সিলেটের ডাকের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছেএ নিয়ে বৃহত্তর সিলেটসহ দেশে-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ছাতক প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের প্রতারণা মামলায় ইতোপূর্বে রাগিব আলী ও তার ছেলের জেল দন্ড হয়েছেতিনি একই মামলায় পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিলের আরজি করেছিলেনদৈনিক সিলেটের ডাকের ছাতক প্রতিনিধি ও ছাতক প্রেসক্লাবের একাংশের সভাপতি সৈয়দ হারুন অর রশিদের সাথে উভয়ের দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো দীর্ঘদিন থেকেএ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলাপাল্টা মামলা চলছেএরই ধারাবাহিতায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিলেটের স্থানীয় দৈনিক সিলেটের ডাক র ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে
রবিবার ১৮জুন ২০১৭ইং শিল্পপতি রাগীব আলীর মালিকানাধীন এ পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়ডিক্লারেশন বাতিল হওয়ায় এখন থেকে সিলেটের ডাক পত্রিকাটি প্রকাশ করা যাবে না। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমককে নিশ্চিত করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। তিনি জানান, হাইকোর্ট থেকে বশির আহমদ নামের এক ব্যক্তি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেনএর প্রেক্ষিতে পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে
এদিকে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সিলেটের ডাক পত্রিকার প্রকাশক রাগীব আলী সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছেআইনত, প্রকাশক সাজাপ্রাপ্ত হলে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল হয়ে যায়ডিক্লারেশন বাতিলের বিষয়টি সিলেটের ডাক পত্রিকার কার্যালয়ে জানানো হয়েছে
বিভিন্ন সুত্রে জানাযায়, ২০০৭ সাল থেকে দীর্ঘদিন ছাতক প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদারনতুন কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান কমিটির একাংশের সভাপতি ও সিলেটের ডাকের সাবেক ছাতক প্রতিনিধি সৈয়দ হারুন অর রশিদের সাথেতিনি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়ে বিজয় অর্জন করতে না পারার সংশয়ে কয়েকজনকে নিয়ে তিনি পৃথক কমিটি গঠন করেন। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে ছাতক প্রেসক্লাবের কার্যক্রম চলে আসছিল প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের মালিকানাধিন রোকেয়া ম্যানশনেপ্রায় দশ বছর গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে চলে ছাতক প্রেসক্লাবের কার্যক্রমএ সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল আলিমনতুন কমিটি ও নির্বাচন নিয়ে প্রেসক্লাব দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েসবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়কিন্তু হঠা বেকে বসেন সৈয়দ হারুন অর রশিদ গ্রুপএকপর্যায়ে সম্মেলনের নির্ধারিত তারিখের একসপ্তাহ আগেই ২০১৪সালের ২সেপটেম্বর কয়েকজনকে নিয়ে একটি পৃথক কমিটি গঠন করেন। এতে সৈয়দ হারুন রশিদকে সভাপতি ও আব্দুল আলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে এ কমিটি গঠন করা হয়
একই সাথে সম্মেলন অনুষ্টানের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ২০১৪সালের ২৬সেপটেম্বর আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদারকে সভাপতি ও আনোয়ার হোসেন রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাতক প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। উভয় কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে দুপক্ষে চরম মতানৈক্য জড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় কাঁদাছুড়াছুড়িও। সৈয়দ হারুন অর রশীদ প্রতিপক্ষ ঘায়েলে সিলেটের ডাককে সাইন বোর্ড হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। তিনি নিজের হাতের কলমটি সৎ পথে ব্যবহার না করে কলমের অপব্যবহার করে গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায় এক শতক মসজিদের ভূমি রেজিষ্ট্রির বিষয় নিয়ে সম্পূর্ন মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও সাজানো সংবাদ প্রচার করেন। এতে উকিল নোটিশ দেয়ার পর মনগড়া বক্তব্য দিয়ে পত্রিকায় একটি দায়সাড়া প্রতিবাদ ছাপান। এতে সৈয়দ হারুন অর রশীদ ও সিলেটের ডাকের সম্পাদক ও প্রকাশক রাগিব আলসিহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মানহানি মামলা দায়ের করেন গিয়াসউদ্দিন তালুরকদার। অপর দিকে প্রেসক্লাবের স্বত্ব নিয়ে জজ আদালতে মামলাপালটা মামলা করা হয়মামলাগুলো বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধিন রয়েছে
এই দ্বন্দ্বের জের ধরে ছাতক প্রেসক্লাবের একাংশের সভাপতি ও দৈনিক সিলেটের ডাকের প্রতিনিধি সৈয়দ হারুন অর রশিদ প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে মানহানীকর সংবাদ প্রকাশ করেন দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায়এতে চরম অপমানে ক্ষুব্ধ হন গিয়াস উদ্দিন তালুকদারডাক কতৃপক্ষের কাছে প্রতিকার না পেয়ে আইনি প্রতিকারের সুযোগের অপেক্ষায় থাকেনগত ১০আগস্ট ২০১৬ইং তারাপুর চা বাগানের ভূমি জালিয়াতির মামলায় আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী তার ছেলেকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যানএ সময় রাগীব আলী সিলেটের ডাক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এবং তাঁর ছেলে আবদুল হাইয়ের নাম পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে ছাপা হয়এই আইনি সুযোগ গ্রহন করেন গিয়াস উদ্দিন তালুকদারপলাতক অবস্থায় পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করে পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেনএ অভিযোগে ছাতক প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন তালুকদার গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ইং সিলেট আদালতে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেনআদালত ওই দিন মামলাটি আমলে নিয়ে দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেনতবে সমন পাওয়ার পরও জবাব না দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়
এদিকে মামলাটি আপোষ করার চেষ্টা করেন ডাক কতৃপক্ষপ্রথম পদক্ষেপ হিসাবে নোটিশ ছাড়াই দুই যুগ কাজ করার পরও গত বছর সিলেটের ডাকের ছাতক প্রতিনিধি সৈয়দ হারুন অর রশিদকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যম পত্রিকা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়কিন্তু বাদী আপোষ না করায় গত ২৩ফেব্রুয়ারি ২০১৭ইং আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়পলাতক থাকা অবস্থায় পত্রিকা প্রকাশের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে ৯ মার্চ ২০১৭ইং বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হরায়ে পিতা-পুত্রের এক বছরের কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়। এর আগে গত ২ মার্চ ২০১৭ইং মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছিলআলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদারের দায়েরী প্রতারনা মামলায় বসির আহমদ নামের একজন সাক্ষী ছিলেন। তিনি সিলেটের ডাকের বেআইনী প্রকাশনার উপর একটি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করলে এর প্রেক্ষিতে ডাকের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে পড়ে। মামলা সূত্রে জানা যায়- ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির মাধ্যমে তারাপুর চা বাগান দখল এবং আত্মসাতের দুই মামলায় গেলো ২০১৬সালের ১০ আগস্ট আদালত রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনপরোয়ানা জারির দিনই ভারতে পালিয়ে যান তারাপলাতক থেকেই রাগীব আলী ও তার ছেলে দৈনিক সিলেটের ডাকপত্রিকা প্রকাশ করেনপত্রিকায় রাগীব আলীর নাম প্রকাশক ও তার ছেলে আবদুল হাইয়ের নাম সম্পাদক হিসেবে ছাপা হয়
পলাতক অবস্থায় পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করে রাগীব আলী ও তার ছেলে পাঠকদের সাথে প্রতারণা করেছেন এমন অভিযোগে গেলো ২০১৬সার ৮ সেপ্টেম্বর নগরীর উপশহরের বাসিন্দা ও ছাতক প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন তালুকদার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেনগত ২০১৭সালের ৬মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালতের বিচারক ৯মার্চ ২০১৭ইং মামলার রায় ঘোষনা করে রাগিব আলী ও তা ছেলে আব্দুল হাইকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন
এর আগে তারাপুর চা বাগান জালিয়াতি মামলায় ১৪ বছর করে দণ্ড হয় রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইয়েরবর্তমানে তারা কারাগারের মালী ও লাইব্রেরিয়ান হিসাবে দিন কাটাচ্ছেনকিন্তু গিয়াস উদ্দন তালুকদারের প্রতারনা মামলা না হলে দৈনিক সিলেটের ডাকের প্রকাশনা অব্যাহত থাকতো বলে অভিজ্ঞমহলের ধারনা। ছাতক প্রেসক্লাবের দ্বন্দ্বের জের ধরেই এরপ্রকাশনা বন্দ্ব হয়েছে বলে জানা গেছে।   
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn