দীন ইসলাম-

উচ্চ আদালতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দিতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। তাই এই রায়ের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের এই নির্দেশনা দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর পরই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আলোচনা করেন। এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল পরবর্তীতে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেন। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বারান্দায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পরই সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আদালতের এই রায়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হলো কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় পূর্ণাঙ্গ রায়টা যতক্ষণ পর্যন্ত না পড়ি ততক্ষণ পর্যন্ত এ কথার জবাব দেয়া যাবে না যে ক্ষুণ্ন হয়েছে কিনা। সবসময় আমার প্রশ্ন থাকবে ১৯৭২ সালের যে সংবিধান ছিল যেটা কনস্টিটিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি সংবিধানের মধ্যে ৯৬ অনুচ্ছেদ ছিল। সেই ৯৬ অনুচ্ছেদ কি করে পুনঃস্থাপন করার পর একটা মার্শাল ল’ গভর্নমেন্ট এটাকে সরিয়ে দিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আনার পর এটাকে আবার সংসদ পুনঃস্থাপন করার পর এটা কিভাবে আল্ট্রভার্স টু দ্য কনস্টিটিউশন হয়, এটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, অপেক্ষা করবো পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য, আশা করবো পূর্ণাঙ্গ রায়টা তাড়াতাড়ি দেয়া হবে। এবং পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব কি করবো। উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোন ধরনের ব্যবস্থা আছে- এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, সারা বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশ ও উন্নত দেশ যেগুলো আছে সেগুলোতে ৯৬ অনুচ্ছেদে (বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া) যে কথাগুলো ছিল মাননীয় বিচারপতিদের অপসারণ করার জন্য ঠিক সেই জিনিসগুলোই আছে। সেই জন্যই ১৯৭২ সালে এটাকে সংবিধানের মধ্যে রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কথা বলা হচ্ছে। সেটা শুধু ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান সাহেব যে কন্সটিটিউশন দিয়েছিলেন তাতে ছিল। এ রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা- এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবো। এই রায়ের পর কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে কিনা- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, কোনো সমস্যা হবে না। তার কারণ হচ্ছে এটা আগেও চলছিল। ২০১৪ সালে সংশোধনী আনার আগেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ছিল। তখন একভাবে চলছিল, তবে এটা ঠিক যে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের যে ৯৬ অনুচ্ছেদ সেটা কিন্তু সংসদ বাতিল করে দিয়েছে। সুতরাং এইখানে এখন যেটা হবে সেটা ভিন্নতর কিছু একটা। সংসদ থেকে নতুন কোনো বিল আনার চিন্তা-ভাবনা আছে কিনা, কারণ সংসদ তো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী- এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, আজকেই এই প্রশ্ন না করে…আমি তো বললাম পূর্ণাঙ্গ রায় না পেয়ে আমরা কোনো কথা বলবো না। এদিকে, একই দিনে শহীদ মিনারে প্রয়াত করুণাময় গোস্বামীর মরদেহে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn