নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়োগ-পদোন্নতি কমিটির যিনি প্রধান তিনিই গণবদলি ও পদোন্নতির ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না। গত রবিবার ইসির অধীনস্থ বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসারদের গণবদলি পদোন্নতি (চলতি দায়িত্ব) প্রদানের এই ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন তিনি। এজন্য ইসির ‘নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন কমিটি’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইসি সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে নোট দিয়েছেন।

মঙ্গলবার ইসি সচিবালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো নোটে বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার। নোটে মাহবুব তালুকদার বলেছেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখতে পেলাম, দেশব্যাপী নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ অফিসারদের বদলি ও পদোন্নতি (চলতি দায়িত্ব) প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে অফিসারদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা পত্রিকায় উঠে এসেছে। এতে কমিশনের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করি। বিষয়টি আমাকে কিছুটা বিস্মিত করেছে। কারণ, কোনো পর্যায়েই আমাকে তা অবহিত করা হয়নি। এমতাবস্থায় সচিব মহোদয়কে বেশকিছু বিষয়ে বক্তব্য অবহিত করতে অনুরোধ করেন তিনি।

বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. বিগত ১২ জুন আমাকে সভাপতি করে, ‘নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন কমিটি’ নামে যে কমিটি গঠিত হয়েছে, উল্লিখিত বদলি বা পদোন্নতি তার কার্যপরিধির আওতায় পড়ে কি না ! ২. গণহারে বদলি বা পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লিখিত কমিটির সভায় তা আলোচিত হওয়া উচিত ছিল কি না। উক্ত বিষয়ে কমিটিকে অবহিত করা না হলে কমিটির আবশ্যকতা থাকে বলে প্রতীয়মান হয় না। ৩. কোন নিয়মনীতি অনুসরণ করে উপরোক্ত বদলি করা হয়েছে, সে বিষয়টি আমাকে জানানো যেতে পারে। ৪. গণবদলি ও পদোন্নতি সম্পর্কে যাবতীয় নির্দেশ, আদেশ ও অন্যান্য নথিপত্র আমার কাছে অনতিবিলম্বে পেশ করা যেতে পারে। উক্ত বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে সচিবকে অনুরোধ করেন মাহবুব তালুকদার। এই ইউও নোটের অনুলিপি অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাসহ বাকি তিনজন নির্বাচন কমিশনারকে পাঠিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, যেহেতু এই নোট কোনো পাবলিক ডকুমেন্ট নয়, সেহেতু এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত রবিবার মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে ইসি। এর অংশ হিসেবে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গণবদলি করা হয়েছে। বিশেষ করে ৩৩ জন সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তর বদল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি আদেশ জারি করেছে ইসি। এছাড়াও ৫ জনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উপ-সচিবের উপরের পর্যায়ের আরো ৫ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকেও চলতি বদলি করা হয়েছে। পাশপাশি ৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপ-সচিবের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করে পছন্দের অফিসারদের ভালো জায়গায় বদলি করা হয়েছে।

সূত্র: ইত্তেফাক

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn