স্বামী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর সঙ্গে রিজিয়া নদভী
স্বামী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বিবেচনায় জামায়াতে ইসলামীর নেতার মেয়ে রিজিয়া নদভীকে মহিলা আওয়ামী লীগের পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে একাধিকবার জামায়াতের এমপি প্রার্থী এবং দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে রিজিয়া ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এখন সাতকানিয়া-লোহাগড়া আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর স্ত্রী। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ফেসবুকে লিখেছেন, বুঝতে পারলাম না, জামাই-বউ সবাইকে পদ পদবী পেতে হবে কেন? তাও আবার জামাতের শীর্ষস্থানীয় নেতার কন্যা ইসলামী ছাত্রী সংস্থার নেত্রীকে?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার মহিলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করলে তাতে কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে ৬৮ নম্বরে রিজিয়ার নাম আসে।   এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক রোববার বলেন, রিজিয়ার বাবা জামায়াতে ইসলামীর নেতা হলেও পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তার স্বামীর পরিচয়ই গুরুত্ব পেয়েছে। তার ওই বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাসহ অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম লিখেছেন, ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা কর্মীর কি দেশে আকাল পড়েছে? কই সভানেত্রীর প্রয়াত স্বামী, বোন বা তাদের সন্তানদেরতো দলের কোনো পদ পদবীতে দেখা যায়নি। নাকি তাদের যোগ্যতার অভাব আছে?

মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমের মন্তব্যের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এই প্রটোকল অফিসার বলেন, নির্বাচন সামনে। দয়া করে এসব আকাম করে, আবার তা ঢাকতে আকথা কুকথা বলে নেতাকর্মীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে তাদের মাঠবিমুখ করবেন না। সামনে কঠিন সময়। ২০০১ এর পর এবং ১/১১ এর সময়ের কথা কি মনে পড়ে না? কারা কোথায় ছিল?

লক্ষ্মীপুর সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন লিটন আঙুল তুলেছেন এমপি নদভীর দিকেও। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, একজন কুখ্যাত রাজাকারের (মিডিয়ার ভাষায়) জামাইর হাতে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক তুলে দিয়ে এমপি বানাল, আর সেই এমপির বউ (রিজিয়া রেজা) মহিলা লীগের শুধুমাত্র সদস্য হওয়ায় এত হৈ-চৈ কেন???

এ বছরের শুরুতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতেও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রিজিয়ার নাম এসেছিল। পরে সমালোচনার মুখে তাকে বাদ দেওয়া হয়।

এবার তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মানা হচ্ছে না অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশিদা হক কনিকা জাওয়াদিন। ফেসবুকে পোস্টে তিনি লিখেছেন, আরে এত ইনিয়ে বিনিয়ে না বলে বলুন আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নির্দেশ মানি না। আমরা আমাদের মতোই কমিটিতে যাকে ইচ্ছে পদ দেব। আপনারাই এখন দলের বড় নেতা, যা বলবেন- তাই হবে। অন্যেরা মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে চুপ থাকবে। চালিয়ে যান, দিন এখন আপনাদের।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে স্বামীসহ রিজিয়া নদভী; ওবায়দুল কাদেরই মহিলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল জোবায়ের হিমু লিখেছেন, জয় হোক, জামাতপন্থি আওয়ামী লীগারদের জয় হোক!!! মিডিয়ার কল্যাণে আমরা আরো জানতে পারি, নদভীর স্ত্রী ৫ জানুয়ারি, ২০১৪ ইং এর নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দক্ষিণ জেলায় জামায়াতের একজন সক্রিয় নেত্রী ছিলেন; অথচ তিনিই আজ জেলা কমিটির একজন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী??!!

শাখা কমিটিতে পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা টাকা নিচ্ছেন কি না- সে প্রশ্ন তুলেছেন হিমু। লিখেছেন, কোনো শাখা কমিটি করার সময় যারা নেতৃত্বে আসছে, তাদের বিষয়ে কেন্দ্র কেন বিস্তারিত তদন্ত করে না??? নাকি কেন্দ্র টাকার লোভে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে!!! যতদিন সংগঠনের উপরের কর্তা-ব্যক্তিরা শুধরাবে না, ততদিন এমনি ঘটনার কেবল মাত্র পুনঃরাবৃত্তি ঘটবে…..

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn