আর মাত্র ২ দিন পরই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ড, আগামী নেতৃত্বে এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অর্জন নিয়ে পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের ৩ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৬ জুলাই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হতে কয়েকমাস সময় লাগবে।

এদিকে, রাজধানীসহ সারাদেশে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নানা অপকর্ম ও ত্রাস সৃষ্টির বিষয়টি নতুন নয়। বর্তমান কমিটির আমলেও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দল, সংঘাত, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, খুন, মারামারির ঘটনা নিয়মিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধের জের ধরে ছাত্রাবাসের ৩৯টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। ছাত্রলীগের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। যারা অপরাধে সংশ্লিষ্ট তাদের কাউকে কাউকে সাময়িক বহিষ্কার করার ঘটনাও আছে। তবে সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর দেখা যায়, অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে রয়েছে।

এদিকে, এবার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। দুজনের বিলাসী জীবন, টাকার ভাগাভাগি, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ এবং কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও থেকে যাওয়া নিয়ে। অভিযোগ উত্থাপন করেছেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। সারাদেশে ছাত্রলীগের অনিয়ন্ত্রিত অপকর্ম নিয়ে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কোনো ভ্রুক্ষেপ করছে না। বরং দিন দিন তাদের অপকর্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার যেন কেউ নেই।

ফলে, ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের সুনাম থাকলেও, বিগত কয়েক বছর ধরে এর অপকর্ম সবকিছু ম্লান করে দিচ্ছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর, শিক্ষক লাঞ্ছনা, আভ্যন্তরীণ সংঘাত, খুনসহ ৩৭টি ঘটনায় ছাত্রলীগ গণমাধ্যমের সংবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১২টি ঘটনার সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার ও আর্থিক বিষয় জড়িত। এছাড়া নারী সংক্রান্ত কেলেংকারি তো রয়েছেই। এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সংগঠনটির ভাবমর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণে বিরক্ত হয়ে এক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর অভিভাবকত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বহুবার ছাত্রলীগকে হুশিয়ার করে বক্তব্য দিয়েছেন। সর্বশেষ ১১ জুন ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় তিনি বলেছেন, টাকার জন্য কোনো অপকর্মে যাওয়া যাবে না। টাকার দরকার হলে আমার কাছে আসবে। আমি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। এসব হুশিয়ারি ও আহ্বান সত্বেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাড়া মেলেনি। তারা একের পর এক তান্ডবীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

ফলে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন, অধিকতর ক্লিন ইমেজের, সহিষ্ণু ও মেধাবি মুখ নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে ছাত্রলীগের। যারা ছাত্রদের জন্য, তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে সম্ভাব্য কাদের হাতে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব দেয়া যায় সে বিষয়ে প্রাথমিক তালিকা তৈরির কথা বলেছেন শেখ হাসিন। গণভবনের একটি সূত্র বিষয়গুলো পূর্বপশ্চিমকে নিশ্চিত করেছে।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn