প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাহিদের নালিশ
মিথ্যা তথ্য দিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হলে আপনি মামলা করতে পারেন- শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে এমনটা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত কয়েকদিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও অধিদপ্তর নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এমন্তব্য করেন। সোমবার (২৪ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় এপ্রসঙ্গ আসে। শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য তার নির্বাচনি এলাকায় একটি টেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। আমরা সবকিছু বিবেচনা করে দেখেছি, সেখানে এ ধরনের কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া যায় না। তাই আমরা সেই কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেইনি। এ কারণে ওই সংসদ সদস্য তার মালিকানায় থাকা একটি দৈনিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার নামে নানান কুরুচিপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।’ তার পরিবারের কোনো ব্যক্তি শিক্ষা সেক্টরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন বলেও উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ যদি আপনার নামে রিপোর্ট প্রকাশ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার আপনার রয়েছে। কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে তাহলে তো আপনি তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মন্ত্রণালয় এবং সিলেটে তার কাছের লোক বলে পরিচিত কিছু লোকের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে বলে ধারাবাহিক প্রতিবেদন উল্লেখ করছে দৈনিক যুগান্তর। এছাড়াও মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের স্থবিরতা ও কোন্দলের বিষয়টি উঠে আসে প্রতিবেদনে। ওইসব প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকায় একটি বহুতল বিশিষ্ট নির্মাণাধীন ভবন যাচাই করতে গেলে অনিয়মের প্রমাণ পান। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গোয়ালাবাজার আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের নির্মাণাধীন চার তলা ভবনের নির্মাণ কাজ গত শনিবার (২২ জুলাই) বিকেলে পরিদর্শন করেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় পরিদর্শনকালে নির্মাণাধীন ভবনের লিন্টার ও পিলার ভেঙে দেখা যায় ভেতরে রড এবং রডের জালি ছাড়াই ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে। ভবনে ব্যবহৃত ইট কংক্রিটসহ অন্যান্য মালামাল নিম্নমানের। এ অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর প্রকৌশলীসহ ১৩ জনকে আসামী করে ওসমানীনগর থানায় এবং দুদকে একাধিক মামলা করাও হয়। এরআগে, মন্ত্রিপরিষদের ওই সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের নামে মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি ও আন্দোলন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেন।
জানা যায়, হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে এই আইনের ৫৭ ধারা ব্যবহার করে অনেকেই সাংবাদিকদের নামে মামলা করছে। সেই মামলায় অনেক সাংবাদিক গ্রেপ্তারও হচ্ছেন। এই মামলা ও গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকরা আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন, রাস্তায় নামছেন। এই মামলার বিরুদ্ধে তারা নানা ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছেন ও তা পালন করছেন। সাংবাদিকরা এই আইনটি বাতিল চান বলেও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন তথ্যমন্ত্রী। এ সময় তথ্যমন্ত্রীর কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, ‘এই ধারায় কতজন সাংবাদিকের নামে মামলা হয়েছে? এই মামলায় কতজন সাংবাদিক জেলে আছেন? সরকার কি কোনও সাংবাদিকের নামে এই ধারা ব্যবহার করে মামলা করেছে? যারা এই ধারা ব্যবহার করে সাংবাদিকদের নামে মামলা করেছে, তারা তো সরকারের কেউ নয়। এই মামলাগুলো যারা করেছেন, তারা তো ব্যক্তিগতভাবে করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের হয়রানির উদ্দেশে তো সরকার এই আইন করেনি। কেউ যদি ইচ্ছা করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু লেখে তাহলে কি হবে? কেউ যদি দেশের ক্ষতি করতে চায় তাহলে কি হবে? কেউ যদি দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই লিখে দেয় তাহলে কি হবে? এসব অপরাধ ঠেকাতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? আইন তো সাংবাদিকদের হয়রানির জন্য করা হয়নি? সরকার তো কোনও সাংবাদিকের নামেও মামলা করেনি।’