রাজনীতিতে তরুণদের আগ্রহ কমছে
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একাধিক তরুণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশই রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হতে অনাগ্রহী। কারণ হিসেবে জানান, অনেকের পরিবার থেকে রাজনীতিতে জড়ানো নিষেধ আবার অনেকে মনে করেন দেশে রাজনীতির সঠিক চর্চা নেই। রাজনীতি অনেক তরুণের কাছে বিরক্তের আবার অনেকের কাছে আতঙ্ক। সন্তানের রাজনৈতিক সচেতনতা ও সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো অভিভাবকরাও ভালোভাবে গ্রহণ করেন না বলে জানান তরুণরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ুয়া আশিক শিফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হওয়া নিষেধ ছিল অভিভাবকদের। তাই ভর্তির পর রাজনীতিতে নিজেকে জড়াইনি।
তবে রাজনীতিকে কিছু শিক্ষিত তরুণ ভালো চোখে দেখছেন। রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাফসিয়া রিয়া বলেন, রাজনীতি তো খারাপ কিংবা নিন্দনীয় বিষয় নয়। বরং এটি গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক। এর মাধ্যমে একটি দেশ, সমাজ, জাতি এবং সর্বোপরি বিশ্ব পরিচালিত হয়ে আসছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ুয়া সায়মন সিফাত বলেন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিবাহিনীর অনেক সদস্য ছিল তরুণ। ৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও মূলত তরুণসমাজই নেতৃত্ব দিয়েছে। তবে এখনকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রভাব বিবেচনায় কতিপয় সুবিধাভোগী নিজেদের সুবিধার্থে রাজনীতিকে ব্যবহার করতে গিয়ে পুরো রাজনীতিকেই কলুষিত করে ফেলেছে।
এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তরুণ ছাত্র-জনতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যেভাবে সাহসি ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছে। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বে আমাদের তরুণরা। তরুণদের শুধু রাজনীতিতে নয় সকল সেক্টরেই তরুণদের মেধাবী ও সাহসী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মেধাবী তরুণরা যদি রাজনীতিতে না আসে তা হলে রাজনৈতিক স্থান মেধাশূন্যদের দিয়ে পূরণ হবে, মেধাহীনদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে যেটা কোনোভাবেই এ দেশের কল্যাণের জন্য কাম্য নয়।
বর্তমান রাজনীতিতে মেধাবী তরুণদের কেন অনাস্থা— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির যে প্রচলিত ধারণা ছিল তা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসকরা রাজনীতিকে নষ্ট করেছে এবং রাজনীতির চরিত্রহরণ করেছে। তারা রাজনীতিকে টাকা এবং পেশীশক্তির একটা আধিপত্য তৈরি করেছিল। অর্থলোভকে রাজনীতিতে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে রাজনৈতিক মাঠে সন্ত্রাসী, মেধাহীনদের রাজনীতির এক অপসংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছিল। ২১ বছরের অপসংস্কৃতিতে তরুণদের মাঝে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিবর্তন হচ্ছে। এখন সরকার ও দলে অনেক আদর্শ ও চরিত্রবান মেধাবী তরুণ নেতৃত্ব দিচ্ছে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, বর্তমানে খুব কম তরুণ-তরুণী প্রকৃত রাজনৈতিক ধারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে আসে। যারা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়, তাদের অধিকাংশের মূল উদ্দেশ্যই থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়া। অনেকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিস্থিতির চাপে পড়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। যেসব তরুণ প্রকৃতই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করতে চায় তারা এই খারাপদের ভিড়ে টিকে থাকতে পারে না। ফলে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে দেশ ও দশের কল্যাণের প্রতি আগ্রহ পায় না। দেশীয় রাজনীতিতে আগ্রহ না থাকলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে তরুণরা সচেতন। প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে তরুণদের মাঝে।