লেবার পার্টির এমপি সিলেটের কন্যা রুশনারা আলীকে ফের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত করার দাবি উঠেছে। কল্যাণ ভাতাবিষয়ক সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ইয়ান ডানকান স্মিথ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর কাছে এমন দাবি তুলেছেন। তিনি মূলত রুশনারা আলীসহ ব্রেক্সিটবিরোধী সব বাণিজ্য দূতকে আবার নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছেন। একই দাবি তুলেছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির আরও একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা। কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতারা বলছেন, যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের বিরুদ্ধে যেসব বাণিজ্য দূতরা ভোট দিয়েছেন সরকারের উচিত তাদের স্ব-স্ব পদে আবার নিয়োগ দেয়া। কল্যাণ ভাতাবিষয়ক সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ইয়ান ডানকান স্মিথ বলেন, এটা খুবই অদ্ভুত যে মুহূর্তে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাচ্ছে- তখনই নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও শুরু করতে যাচ্ছে। আমাদের এখন উচিত যেসব বাণিজ্য প্রতিনিধিরা স্পষ্টভাবে ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করেছে তাদের পুনর্বহাল করা। এক মুহূর্তও আমাদের নষ্ট করা যাবে না।

২০১৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত হিসেবে নিয়োগ পান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তার নিয়োগ চূড়ান্ত করেন। এই নিয়োগকে তখন বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য আগ্রহের প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়েছিল।২০১০ সালে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বাউ এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হন রুশনারা আলী। বাণিজ্য দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং দুই দেশের পারস্পরিক বন্ধন দীর্ঘদিনের। আমার কাছে বাংলাদেশের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আমার নির্বাচনী আসনের এক তৃতীয়াংশ মানুষ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আমিই প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সদস্য। আমি দেখতে চাই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সফল হিসেবে গড়ে তুলতে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা থাকুক। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত হিসেবে তিনি ঢাকা সফর করেন।

চলতি বছরের গোড়ার দিকে দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (নোটিফিকেশন অব উইদড্রয়াল) নামে বিল নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ঐতিহাসিক বিতর্কে অংশ নেন রুশনারা আলী। এ সময় তিনি বলেন, একজন উৎসাহী ইউরোপীয়ান হিসেবে, একজন গর্বিত লন্ডনবাসী হিসেবে ব্রিটেন ছিল আমার এবং আমার পরিবারের জন্য একটা স্বাগত আবাস। আমার নির্বাচনী এলাকার ৭০ শতাংশ মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমি এ বিলের পক্ষে ভোট দিচ্ছি না। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার এবং কাস্টমস ইউনিয়ন থেকে আমাদের বের করে আনার প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা আমি সমর্থন করি না। কারণ লন্ডন ও ক্যানারি ওয়ার্ফ শহরে যখন এটা আসবে তার প্রভাব হবে মারাত্মক। এটা আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর স্বপক্ষে তথ্যসমৃদ্ধ যুক্তি রয়েছে। ৭০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষের চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছে। এটা শুধু চাকরির বিষয় নয়। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এটাকেই স্বাগত জানানো হচ্ছে। লন্ডন ও ক্যানারি ওয়ার্ফ-এ কর্মরত মানুষদের জন্য এটাই পরিবেশন করা হচ্ছে।

রুশনারা আলী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার থেকে বেরিয়ে আসলে আমার নির্বাচনী আসনের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। জাতীয় অর্থনীতেও এর প্রভাব পড়বে। আমাদের অধিকার রয়েছে লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্রেক্সিট কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু সংক্রান্ত এ বিলের বিরোধিতা করার। জাতীয় স্বার্থের দোহাই দিয়ে আমি এতে ছাড় দেব না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn