টেকেরঘাটের ডিসি পার্কের শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেকে (চুনাপাথরের পতিত গভীর কোয়ারি) গোসলে নেমে  নিখোঁজ ওয়াহিদ পলিন (২৮) নামে পর্যটকের লাশ প্রায় ৪০ ঘন্টাও উদ্ধার হয়নি। সিলেট থেকে ডুবরী শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে পৌছে রবিবার বিকাল ৬টা পর্যন্ত কয়েক দফা খোজাখুজির পরও  তার তার সন্ধান মেলেনি।’ এখন নৌ-বাহিনীর ডুবুরি দলই নিখোঁজ পলিনকে উদ্ধারে শেষ ভরসা হয়ে দাড়িয়েছে।
‘‘সরকার নৌ-বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের নিকট পুত্রহারা পিতার শেষ আকুতি- জীবিত না হওক অন্তত একমাত্র ছেলের লাশটুকু উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে দেয়া হওক!’’এদিকে পর্যটক ওয়াহিদ পলিন লেকের পানিতে নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রবিবার সকাল থেকেই লেকের চারপাশ এমনকি ভারতীয় জিরো লাইনের মেঘালয় পাহাড়ের ওপর এপার- ওপারের কয়েক হাজার লোকজন সমবেত হয়ে তার উদ্ধার কাজে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।’ দেশ বিদেশে পর্যটক বান্ধব এলাকা হিসাবে পরিচিতি এ সুনামগঞ্জ জেলা জুড়ে এ ঘটনায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছাঁয়া।’

ঢাকা থেকে শনিবার বিকালে সংবাদ পেয়ে তিনিসহ তার স্বজনরা তাহিরপুর উপজেলার নিলাদ্রী ডিসি পার্ক লেকে রবিবার সকালে আসেন। যেদিক দিয়ে নিখোঁজ ওয়াহিদ পলিন লেকে গোসল করতে নেমেছিলেন সেখানে বসে ছেলের সন্ধান ছেয়ে তিনি বিলাপ করেন।
নিখোঁজ পর্যটকের পিতা জানান, তার এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সে বড় ছিল। সে গত বছর মাষ্টার পাশ করে ঢাকার একটি প্রাইবেট কোম্পনীতে চাকরী করতো। কথা ছিল এ বছরেই ছেলের বিয়ে দিয়ে ঘরে পুত্রবধু আনবেন। মাতা পিতার একমাত্র ছেলে হওয়ায় যখন যা ছেয়েছে তখনই তার আব্দার সাধ্যমত রক্ষা করেছেন তিনি। তার উপর পুরো পরিবারের অনেক আশা ভরশা ছিল। সেই আশা আখাংকা নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে বলে তিনি বার বার চোখের পানি ফেলে নিলাদ্রী লেকের পাশে বসে বিলাপ করেন।
সিলেট থেকে আসা ডুবরী কবির হোসেন সাড়ে ৫টায় জানান, তিনি নিখোঁজ ব্যাক্তিকে খোজে বের করতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। তার পক্ষে এতো বড় লেকে নিখোঁজ ব্যাক্তিকে একা খোজে বের করা সম্ভব না, এখানে আরো ডুবরী প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলায় ডুবরী অথবা দমকল বাহিনী না থাকায় নিখোঁজ ব্যাক্তিকে উদ্ধার করতে বিভাগীয় শহর সিলেট থেকে একজন ডুবরী আনা হয়। শনিবার রাত ৯টা ২০ মিনিট থেকে ডুবরি উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন। শনিবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যাক্তিকে উদ্ধার করতে পারেননি ডুবরী। পরে আবওয়া খারাপ হওয়ায় দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রিট রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ স্থগিত করেন। রবিবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিট থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কয়েক দফা উদ্ধার অভিযান চালিয়েও নিখোঁজ ব্যাক্তির সন্ধান পাননি ডুবরি।

এইদিকে নিখোঁজের পিতা মোস্তফা কামাল উদ্ধার কাজ বিলম্ভ হচ্ছে বলে উৎকুণ্ঠা প্রকাশ করেন।  তিনি বলেন, এতো বড় লেকে একজন মাত্র ডুবরি দিয়ে তার ছেলেকে খোজে বের করা সম্ভব হবে না। বেশী করে ডুবরী এনে তার ছেলেকে খোজে বের করার দাবি জানান প্রশাসনের প্রতি।

এ ব্যাপারে তাহিরপুরের টেকেরঘাটের ঘটনাস্থল থাকা টাঙ্গুয়ার হাওরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাকিল আহমেদ সন্ধায় বললেন, নিখোঁজ ওয়াহিদ পলিনের সন্ধানে শনিবার-রবিবার স্থানীয় লোকজন ও সিলেট থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাদেও পক্ষ থেকে সব ধরণের চেষ্টা চালিয়েও সন্ধান পেতে ব্যর্থ হয়েছেন এখন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে ঢাকা থেকে নৌ-বাহিনীর ডুবুরি দলকে নিয়ে আসার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, আশা করি নৌ-বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করলে নিখোঁজ ওয়াহিদ পলিনের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।’

উল্ল্যেখ যে, রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাহিদ, মারুফ হোসেন, ওয়াহিদ পলিন, রুশনী ও বাঁধনসহ ৫ বন্ধুবান্ধব মিলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুগুয়ার হাওরে শুক্রবার ভ্রমণে এসে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের নৌঘাটে রাত্রীযাপন করেন। শরীরের টায়ার জড়িয়ে শনিবার দুপর ২টার দিকে ওয়াহিদ পলিনসহ সবাই টেকেরঘাট সীমান্তের জিরো লাইন বরাবর ডিসি পার্কের শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেকে গোসল করতে নামলে ৪ বন্ধু গোসল শেষে তীরে উঠে এলেও ওয়াহিদ পলিন সাঁতার না জানায় লেকের পানিতে ডুবে যেতে থাকেন।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn