মিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় ঘুমাতো জেএমবির শীর্ষ নেতারা
রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম থানার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দক্ষিণে অবস্থিত বর্ধমান বাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানায় নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা সারোয়ার জাহান ও তামিম চৌধুরী ঘুমাতো।এছাড়া ওই ভবনটি জঙ্গিদের ট্রেনিং সেন্টার হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। মিরপুরের দারুস সালামে বুধবার বিকালে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলাকালে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। বেনজীর আহমেদ বলেন, মিরপুরের এই জঙ্গি আস্তানায় আসা-যাওয়া ছিল নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা সারোয়ার ও তামিমের। তারা নিয়মিত এই বাড়িতে আসত এবং এই বাড়ির ওই পাঁচতলা ফ্ল্যাটে খাওয়া, ঘুমানোসহ জঙ্গিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা করত।তিনি বলেন, জঙ্গি আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত এই বাড়িটি ছিল জঙ্গিদের ট্রেনিং সেন্টার। এই বাড়িতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করত দারুস সালামে নিহত জঙ্গি আবু আব্দুল্লাহ। সে শুধু প্রশিক্ষণই না, জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও অর্থ যোগানদাতা হিসেবে কাজ করত। ২০০৫ সাল থেকে সে জেএমবির সদস্য হয় এবং জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে।
র্যাবের ডিজি আরো জানান, জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে আব্দুল্লাহ নামের এক জঙ্গি। কিন্তু আমরা তার সন্ধান করতে পারিনি। পরে এই অভিযানে গোয়েন্দা তথ্য ও টাঙ্গাইলের অভিযানের পর তার অবস্থান ও তথ্য সম্পর্কে জানতে পারি। পরে এই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।তিনি আরো জানান, এই অভিযান থেকে বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করে তা তদন্ত করে দেখা হবে। আর উদ্ধার অভিযানে চলবে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত।কানাডায় বেড়ে ওঠা জঙ্গি তামিমকে জঙ্গিদের নতুন ধারায় তৎপরতার নেপথ্য ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। তিনি নারায়ণগঞ্জে এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন। তামিমের বাবা শফি আহমদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তিনি সপরিবারে কানাডায় পাড়ি জমান। কানাডার উইন্ডসরে থাকার সুবাদে ৩০ বছর বয়সী তামিমের বেড়ে ওঠাও সেখানে।
হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এই তামিমকেই চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ১০ জনের যে প্রথম তালিকা দিয়েছিল, তাতে সিলেটের তামিমের নাম আসে।এছাড়া র্যাবের দেয়া তথ্যানুযায়ী কথিত নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা সারোয়ারের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলারহাটে। তার বাবা সেখানে দর্জির কাজ করেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সারোয়ার জাহান তৃতীয়। ভোলারহাটে বাড়ির পাশেই ১০ বছর বয়সে হাফিজিয়া কেরাতিয়া মাদ্রাসায় পড়তেন সারোয়ার জাহান। দু’বছর পর ১৯৯৮ সালে তিনি নাটোরের নাচোলে একটি কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তিন বছর পড়ার পর ২০০১ সালে সে বগুড়ায় একটি কওমি মাদ্রাসায় পড়তে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। বগুড়ায় পড়ার সময়ই বাংলা ভাই নামে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলামের নেতৃত্বে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বা জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ২০০৩ সালে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর আক্রমণ করার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সেই ঘটনায় নয় মাস জেল খেটেছিলেন তিনি। গত ৮ অক্টোবর র্যাবের যে অভিযানে সারোয়ার জাহান নিহত হয়, সেই বাড়ি থেকেই তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে আটক করা হয়েছিল।