অধিবেশন মঙ্গলবার, জাতিসংঘ শেখ হাসিনার ভাষণ ২১ সেপ্টেম্বর
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক স্থানীয় সময় মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এই বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের প্রায় শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মত এই বিতর্কে অংশ নিতে স্থানীয় সময় সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছবেন বলে জানা গেছে। এদিকে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে স্থানীয় সময় রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অধিবেশনে তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. জিয়াউদ্দিন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বিমাবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে উপস্থিত প্রবাসীরা এসময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে তারা ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলেও জড়ো হন। এসময় সেখানে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রেস উইং জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের একমাত্র সরকার প্রধান, যিনি পর পর ৯বার সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার নজির স্থাপন করলেন। ২১ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়া ছাড়াও একইদিন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এরপর রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।
এর আগে পানি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের একটি প্যানেলের চতুর্থ বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র টাইম স্কয়ারের ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলে অনুষ্ঠেয় এই সংবর্ধনায় প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেবেন বলে আশা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।স্থানীয় সময় সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত ‘জাতিসংঘ সংস্কার’ বিষয়ক এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘প্রিভেনশন অব সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন অ্যান্ড অ্যাবিউজ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন ‘গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ‘গ্রোথ’ বিষয়ক এক ফলোআপ বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। একই দিনে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের সভাপতিত্বে ‘উইমেন্স ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট ফর লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ও কমনওয়েলথের বর্তমান চেয়ার-ইন অফিস মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকেট আয়োজিত কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। পরে ম্যাডিসন অ্যাভিনিউয়ের প্যালেস হোটেলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পরমাণু অস্ত্রনিরোধ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। ‘এসডিজি ইমপ্লিমেন্টেশন, ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড মনিটরিং: শেয়ারিং ইনোভেশনস থ্রু সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রাইয়াঙ্গ্লুার কো-অপারেশন’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। ইউএনডিপি ও ইউএন অফিসের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
একই দিনে ‘ক্রিয়েটিং এ পলিসি ভিশন ফর এসডিজি ফাইন্যান্স: ফ্যাসিলিটেটিং প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য এসডিজি’স শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত একটি মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে ইথিওপিয়ার প্রতিনিধিদল আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের উন্মুক্ত আলোচনাতেও এদিন যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক থেকে ভার্জিনিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সেখানে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিবারের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। পরিবারের সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে তিনি দিনটি কাটাবেন বলে জানা গেছে।২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী রয়েছেন ৫২ জন। তবে ১৭৩ জনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিজ খরচে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।