বাংলাদেশিদের অব্যাহত অভিযাত্রা বদলে দিচ্ছে নিউইয়র্কের বাফেলো নগরকে। বাফেলো শহরে এক সময় সন্ত্রাসীদের দাপট ছিল। পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছিল ঘরবাড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলাদেশিদের অভিবাসনে শহরের চেহারাই বদলে গেছে। ইস্ট সাইড নেইবারহুডে প্রোপার্টির ভ্যালু বেড়ে যাচ্ছে। বাড়িগুলোর মালিকানা নিচ্ছে বাংলাদেশিরা। নিজেদের বসতির ফলে এলাকার সন্ত্রাস উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ডিটেইল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বোধন হচ্ছে। ভাঙা বাড়িগুলো পুনর্নির্মাণ হচ্ছে, ফলে সিটিতে জমির মূল্য  বেড়েছে। বাংলাদেশিরা বাড়ি কেনা এবং রিপেয়ার করেই ক্ষান্ত হয়নি, নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছে বাফেলোতে।

হালাল  মার্কেট, রেস্টুরেন্টে, ড্রাইভিং স্কুল, বাঙালি স্কুল, ফার্মেসি, বারবার শপ খুলছে বাংলাদেশিরা যাদের অধিকাংশই এখানে নবাগত। গত এক যুগ ধরে বাফেলোতে বাংলাদেশি কমিউনিটি ক্রমান্বয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশিদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চারটি মসজিদ ও ইসলামিক কেন্দ্র। বাংলাদেশিরা নিউইয়র্ক সিটি, ডেট্রয়েট, পেনসিলভানিয়া এবং নিউজার্সি থেকে মূলত বাফেলোতে মুভ করছে। পাশাপাশি দেশ থেকে আসা নবাগত অভিবাসীরা বাফেলোকে নতুন ঠিকানা হিসাবে বেছে নিচ্ছে। বাফেলো আগামী দিনের এক খণ্ড ‘বাংলাদেশ’ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সেই এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের মূলধারার দৈনিক প্রথম আলোকে পাশে চেয়েছেন সেখানকার অভিবাসীরা।
৩০শে অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় বাফেলোতে এক অনির্ধারিত আড্ডায় প্রবাস জীবন, স্বদেশ জীবন, সংবাদ-পত্র, রোহিঙ্গা শরণার্থী, প্রকৃতি-পরিবেশ, ভাষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলাপচারিতায় বাফেলোর সম্ভাবনার কথা উচ্চারিত হয়। বাংলাদেশ থেকে আসা পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক ও সমাজকর্মী আবদুল করিম কিম ও মরমি সাধক হাসন রাজার প্রপৌত্র বিশ্বনাথ উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সমাজসেবী দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরীকে নিয়ে এ অনির্ধারিত আড্ডার আয়োজন করেন বাফেলোতে বসবাসরত প্রবাসীরা। বাফেলো সিটির পার্কার অ্যাভিনিউ-এর বাঙালি কমিউনিটি প্রতিষ্ঠানে সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুব রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত প্রবাসী কমিউনিটি সংগঠকেরা জানান নিজেদের অগ্রযাত্রা ও সম্ভাবনার সংবাদ। পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক আবদুল করিম কিম বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা কোনোভাবেই দেশকে জীবন থেকে এক মুহূর্তের জন্য মুছে দিতে পারে না। ঘুরে ফিরেই দেশ আসে। দেশের কথা জানার আগ্রহ আসে। তিনি বলেন, দেশ ভালো নেই। নানা ভাবেই দেশে সংকট চলছে। শরণার্থী সংকট, জঙ্গিবাদের সংকট, গণতন্ত্রের সংকট, নেতৃত্বের সংকট। দেশের সবকিছুই নষ্টদের দখলে। নদী দখল, হাওড় দখল, বন দখল, ভূমি দখল শুধু দখল আর দখল। এই দখলবাজদের হাত থেকে দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনের ঢাল-তলোয়ারহীন কিছু নিধিরাম সর্দার স্রোতের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। সেই লড়াইয়ে প্রবাসীদের সমর্থন প্রয়োজন।

দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী বলেন, কাঁদা মাটির বাংলাদেশের মূল শক্তি পলির মতো নরম মানুষেরা। এ মানুষেরা দেশের থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও দেশকে বুক পকেটে তুলে রাখে। এরাই লালন ফকির, হাসন রাজা, রাধা রমণ, শাহ আবদুল করিম-দের স্মরণে রেখে নব-প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করে। তিনি বলেন, দেশের যে কোনো দৈবদূর্বিবাক তাঁদের চিন্তায় ফেলে। চলমান সময়ে দেশে অব্যাহত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ অবশ্যই দুর্ভাবনার। রোহিঙ্গাদের পাশে বাংলাদেশ সীমিত সাধ্য নিয়েই দাঁড়িয়েছে। তিনি, প্রবাসীদের সতর্ক করে বলেন রোহিঙ্গাদের সাহায্যের নামে যে কারও আবেদনে সাড়া দিয়ে অর্থ প্রেরণ না করতে। তিনি উল্লেখ করেন, এক শ্রেণির টাউট প্রবাসীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে যে কোনো সংকটে সাহায্য সংগ্রহে নামে। এদের মাধ্যমে সহায়তা না দিয়ে সরকারি ফান্ডে দেওয়াটা সঠিক। কমিউনিটির অন্যতম নেতা আখতার হোসেন শাহিন বলেন, বাফেলোতে পরিবারের মতো আছেন স্বদেশিদের নিয়ে। দূর দেশে তাদের বন্ধন শুধু স্বদেশি হিসেবে নয়। জীবনকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একে অন্যকে সহযোগিতা করারা অনন্য চিত্রে দেখা যায় বাফেলোর বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে।
নিউইয়র্কের কমিউনিটি সংগঠক ও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মজুমদার পরিবারের উত্তরসূরি শাহান বখত মজুমদার বলেন, একটি সংবাদমাধ্যম উৎসাহ দিয়ে, নিজেদের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যা করা প্রয়োজন, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা তা করে যাবে। নিউজার্সির তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ জাহিদ হোসেন কচি বলেন, সাধারণ অদক্ষ প্রবাসীরা এসে একটি নগরের চিত্র পালটে দিচ্ছেন-যা দেখলেই অনুপ্রাণিত হতে হয়।  সভাপতির বক্তব্যে মাহবুব রহমান বলেন, বাফেলোর মতো সম্ভাবনার এলাকায় স্বদেশিদের অবস্থান দৃঢ় করারা জন্য তিনি নিরলস কাজ করতে প্রস্তুত আছেন। তিনি নিউইয়র্কের নগরকেন্দ্র থেকে দূরে থাকা প্রবাসীদের সুখ দুঃখের সঙ্গে একাত্ম থাকার জন্য প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে ধন্যবাদ জানান। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কয়সর আহমদ, জিয়াউল হক ওসমানী (ইয়ানী), মাহবুবুল কবির মারুফ, আশফাক চৌধুরী মিহির, মোহাম্মদ ফখর, রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn