‌‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশকে নাও চিনে’—গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে বেজেছিল গানটি। সেদিন জুনিয়র এশিয়া কাপ হকিতে ভারতের বিপক্ষে ৫-৪ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। তাই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্বাগত গানটিই হকির নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিল। হকিতে নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলা ভারতকে হারানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। সেই ভারতের বিপক্ষে হেরেই মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে গতকাল বাজল ‌‘চাকদে ইন্ডিয়া’। তা-ও আবার ৭-০ গোলের বড় পরাজয়। সেই একই মাঠ, সেই এশিয়া কাপই। পার্থক্য বলতে জুনিয়র এশিয়া কাপের জায়গায় মূল এশিয়া কাপ। কোনো সন্দেহ নেই, বয়সভিত্তিক ও সিনিয়র পর্যায়ের মানদণ্ড এক নয়। তাই বলে ফারাকটা এত বড়! জুনিয়র টুর্নামেন্টে ভারতকে হারানোর অর্থ ভারতের বিপক্ষে জয়ের সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ। আর ছোটদের এশিয়া কাপে পাওয়া সেই জয়টি তো অঘটনও নয়। সে টুর্নামেন্টের ফাইনালে শেষ মুহূর্তের গোলে ভারতের কাছে ৫-৪ গোলে হেরে রানার্সআপ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু সিনিয়র পর্যায়ে নামলেই হালে পানি পায় না এ দল। কারণটা কী? সবারই জানা, ‘সিস্টেমের দোষ’। বাংলাদেশের হকিতে কাঠামো বলে কিছুই নেই। ঘরোয়া লিগ তো ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার মতো, কবে হকি লিগ হবে—তা জানা নেই কারও। খেলার চেয়ে মাঠের বাইরে চেয়ার নিয়েই সারা বছর হয় বড় খেলা। নির্বাচনের অজুহাতে বারবার পেছায় লিগ। ফলে বড় টুর্নামেন্টে নামলেই গোলের মালা উপহার পায় বাংলাদেশ। ভারতের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ৭ গোল হজম করেছেন জিমিরা। কোচ কাওসার আলীর অধীনে জুনিয়র এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। গতকাল মাঠে বসেই দেখলেন ভারতের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ। এর পেছনের কারণ সম্পর্কে জানা কথাটিই আর একবার বললেন বিকেএসপির অভিজ্ঞ এই কোচ, ‘এশিয়া কাপ খেলার মতো প্রস্তুতি বাংলাদেশ নেয়নি। তিন মাস প্র্যাকটিস করলাম আর চীনে গেলাম, এতে প্রস্তুতি হয় না। এই ফলাফলে আমি মোটেও অবাক হয়নি।’

ভারতের বিপক্ষে কাল ৭ গোল হজম করেছেন জিমিরা। ছবি: প্রথম আলোএক বিকেএসপির ওপরে ভর করেই চলছে বাংলাদেশের হকি। বলা যায় বিকেএসপির ছেলেরাই হারিয়েছিল ভারতকে। কারণ পুরো দলটিই ছিল বিকেএসপির ছাত্রদের নিয়ে তৈরি। সে দল সম্পর্কে কোচ কাওসার আলী বলেন, ‘বিকেএসপিতে থাকাকালীন আমাদের একটা পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু বিকেএসপি থেকে বের হয়ে গেলে এরা কোথায় খেলবে, কার সঙ্গে খেলবে, কারা খেলাবে, তা কেও জানে না!’ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেছিলেন ডিফেন্ডার আশরাফুল রানা। গতকালও তিনি ছিলেন। কিন্তু কোথায় তাঁর ঝলক। ভারতকে হারানো ওই দলটি থেকে আশরাফুল, অধিনায়ক রোমান সরকারসহ ৬-৭ জন আছেন জাতীয় দলে। তাঁদের মেধা নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই। কিন্তু যদি পাইপলাইন ঠিক থাকত, তাহলে এতগুলো তরুণের জাতীয় দলের সুযোগ পাওয়ারও কথা ছিল না। ফলে অনভিজ্ঞ অবস্থায় বড় টুর্নামেন্টে মাঠে নামতে হয় তাঁদের। আবার পরিকল্পনার অভাবে তরুণ বয়সেই ঝরে পরেন তাঁরা। এভাবেই চলছে দেশের হকি।
এখানে ৭ গোল হজম করা অমূলক কিছু নয়!

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn