বিগত বেরো মৌসুমে জেলার ৩৬ টি হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি, চুক্তি মোতাবেক কাজ না করায় সুনামগঞ্জ পাউবো’র ৪৭ জন ঠিকাদারের সঙ্গেই চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। গত বুধবার পাউবোর উর্ধ্বত কর্তৃপক্ষ এই চুক্তি বাতিল করেন। এই ঠিকাদারদের সকলেই দুদকের মামলার আসামী। একই সঙ্গে পিআইসি ও পাউবোর তদারক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সকল আইন-কানুন মেনে ঠিকাদার, পিআইসি ও পাউবোর তদারক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার লক্ষ্যে পাউবো এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিগত মৌসুমের বাঁধের কাজ পরিমাপ করার জন্য ৪ টি টিম এবং একজন যুগ্মসচিবসহ ৫ জন কর্মকর্তার নেতৃত্বে আলাদা তদারক টিম সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে। এই টিমগুলো পুরো হাওরাঞ্চলে বিগত মৌসুমে কোথায় কতটুকু বাঁধ হয়েছিল তা পরিমাপের কাজ করবে।
পাউবোর একজন কর্মকর্তা জানান, জেলার ১১ উপজেলার ৩৬ টি হাওরের ১৬০ টি প্যাকেজের ৪৭ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গত ৩১ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ (স্মারক নম্বর-আর-১৩/২৭০) পাঠানো হয়। চিঠির জবাব দেবার জন্য ২৮ দিন সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ঠিকাদারদের পাঠানো চিঠির জবাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ৪৭ ঠিকাদারের সঙ্গেই গত বুধবার চুক্তিপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় পাউবো। পাউবোর ঐ কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তিপত্র বাতিল করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পানি নেমে যাওয়ার পর ঠিকাদারদের কর্ম এলাকায় গিয়ে স্থানীয় কৃষকসহ গণমান্যদের উপস্থিতিতে তারা কী পরিমাণ কাজ করেছিল তা পরিমাপ করবেন একজন সহকারী প্রকৌশলী এবং একজন সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে ৪ টি টিম।  এই টিমগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবল থাকবে। এক সঙ্গে আগামী বোরো ফসল রক্ষায় কোথায় কী করতে হবে, এটিও পরিকল্পনা করতে সহায়তা করবে এই টিমগুলো। তারা বিগত মৌসুমে পিআইসির করা বাঁধের কাজের পরিমাপ এবং ঠিকাদার ও পিআইসির কাজের তদারককারীরা কী দায়িত্ব পালন    করেছেন সেই তথ্যও সংগ্রহ করবেন। পাউবো ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গঠিত এই কাজের তদারক টিমের প্রধান করা হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূজহাত ইয়াসমিনকে।
পাউবোর সুনামগঞ্জের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন, ‘গত বছর বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ৮০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। ঐ সময় ২৫ কোটি টাকার বিল দেওয়া হয়েছিল। পরিমাপ করা শেষে পিআইসিরা কাজ না করে বিল নিয়ে থাকলে টাকা ফেরৎ দেবার জন্য সার্টিফিকেট মামলা হবে। ঠিকাদার যারা কাজ করেনি, তাঁদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। দেশের অন্য কোথাও তারা কাজ করে থাকলে সেই কাজের বিল থেকে এই টাকা কর্তন করা হবে।’ পাউবোর কর্মকর্তা যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, দায়িত্ব পালন করেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন,‘দুদক তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। দুদকের তদন্ত থেকে তাদের গাফিলতি অনিয়ম বেরিয়ে আসবে। পাউবো ও মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গঠিত টিমগুলো তাঁদের গাফিলতির বিষয় তুলে ধরবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn