এনামুল হক-
সুনামগঞ্জ-১ আসনের (ধর্মপাশা-মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর) এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন তাঁর নির্বাচনী এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীর এক বছরের বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিয়ে  কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিপাকে পড়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন উত্তোলন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে শিক্ষার্থীরা এমপির ঘোষণাকে প্রাধান্য দিয়ে বেতন দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এতে করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের মৌন দ্বন্দ্ব চলছে। শিক্ষার্থীদের বেতন উত্তোলন না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে আর্থিক সংকটে।
জানা যায়, চলতি বছর অকাল বন্যায় ও হাওরের বাঁধ ভেঙে হাওরাঞ্চলে ফসলডুবি হলে স্থানীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ১৩ মে তাঁর নির্বাচনী এলাকার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের এক বছরের বেতন পরিশোধের ঘোষণা দেন। তখন থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের (উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ছাড়া) এক বছরের বেতন প্রায় ৪ কোটি টাকা। সম্প্রতি বাদশাগঞ্জ পাবলিক হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের এক বছরের বেতন ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার ধর্মপাশা উপজেলা সদরের জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৩৩৩ জন। খন্ডকালীন শিক্ষকসহ মোট ২৭ জন শিক্ষক রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বেতন পরিশোধ না করায় গেল কয়েক মাস ধরে শিক্ষকদের বেতন ঠিকমত পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফিসহ বেতন উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়। তবে এ সময় অনেক শিক্ষার্থীই বেতন পরিশোধ করেনি। কবে নাগাদ এমপি জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের বেতন পরিশোধ করবেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি। শুধু এ বিদ্যালয়ই নয় ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার মোট ৬৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন করুণ অবস্থা। তবে কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ভয়ে এমন অবস্থা স্বীকার করতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিয়ে এমপি বেতন পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। শিক্ষকদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের আনুসাঙ্গিক খরচ মেটানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ধর্মপাশা জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলমগীর কবির বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক বছরের বেতন ১৭ লাখ টাকার ওপরে। এমপি বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিয়ে তা পরিশোধ না করায় বিদ্যালয়ে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। শিক্ষকদের ঠিকমত বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। কবে নাগাদ বেতন পাওয়া যাবে তাও নিশ্চিত হতে পারিনি।’ এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন জানান, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্র্থীদের বেতন পরিশোধ করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn