মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারীরা খাবার, পানি, কাপড় ও ওষুধের জন্য রীতিমতো ‘লড়াই’ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘরবাড়ি, স্বজন হারিয়ে হতাশাগ্রস্ত এসব রোহিঙ্গা নারীর চরম দুর্দিনে যৌনতার বিনিময়ে নগদ অর্থের প্রস্তাব দিচ্ছে একশ্রেণির মানুষ। স্যাঁতস্যাঁতে একটি ঘরে চারজন রোহিঙ্গা নারী বসেছিলেন। অর্থের বিনিময়ে যৌনতা বিক্রি করতে চান কি না- এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া কিনি’র প্রতিবেদক জানতে চাইলে অস্বস্তিতে পড়ে যান ওই নারীরা। মাথা নিচু করে তারা নিশ্চুপ থাকেন। কিছুক্ষণ পর একই প্রশ্ন করলে একে অন্যের দিকে চোখাচোখি করেন। কোনো সাড়াশব্দ না করে তাদের একজন একটি ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেন। আরেকজন গিয়ে জানালা বন্ধ করে দেন। অন্ধকার যেন তাদের লজ্জা কিছুটা ঢেকে দিতে পারে। অন্যদেরও কণ্ঠ জড়িয়ে যাওয়ায়, তারাও কিছু বলতে পারেননি। খানিক পরে অবশ্য ২৬ বছর বয়সী রমিদা বলেন, ‘আমরা যে কী করছি সেটা কেউ জানতে পারলে তারা আমাদের মেরে ফেলবে।’ গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের বেশ কিছু তল্লাশি চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার জেরে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। জীবন বাঁচাতে এখন পর্যন্ত ছয় লাখ তিন হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ। রাখাইন ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিশাল অংশ কুতুপালং আশ্রয়কেন্দ্রে থাকে। সেখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারীদের যৌনকর্মী হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টায় তৎপর একশ্রেণির দালাল।
নূর নামের এক দালাল জানান, অন্তত পাঁচশ রোহিঙ্গা যৌনকর্মী রয়েছে কুতুপালংয়ে। তারা এখন নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করছে বলেও জানান তিনি। তবে কতসংখ্যক রোহিঙ্গা যৌনকর্মীর পথ বেছে নিয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই জাতিসংঘের কাছেও। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থার লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাবা জারিফ জানান, এ সংখ্যা নির্ধারণ করাটা কঠিন এবং ক্যাম্পে ঠিক কতসংখ্যক যৌনকর্মী রয়েছে সে ব্যাপারে আমরা কোনো তথ্য সংগ্রহ করিনি। ইসলাম ধর্মে যৌনকর্মী হওয়ার প্রতি কড়া নিষেধাজ্ঞার পরও তারা বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করে যৌনকর্মী হচ্ছে। নূর বলছেন, ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে এসব যৌনকর্মী বাংলাদেশি মক্কেলদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যারা যৌনকর্মী হচ্ছেন, তাদের অনেকেরই বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চার খাবারের জন্য তারা বাধ্য হয়ে যৌনকর্মী হচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের পরিবারের কেউ জানে না, তারা কী করছে।

১৮ বছর বয়সী রিনা যৌনকর্মী হিসেবে থাকার পর দু’বছর আগে মাদকাসক্ত এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন। পরে সেই ব্যক্তি রিনাকে ফেলে চলে গেছে। বিয়ের পর থেকেই মারধরও করত সেই মদ্যপ ব্যক্তি। এখন এক সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা রিনা। সে কারণে পুনরায় যৌনকর্মী হয়েছেন রিনা। তিনি জানান, সেই সময় আমার বয়স মাত্র ১৬ বছর ছিল। বর্তমানে আমি হতাশার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। আমার আসলে টাকার দরকার। দারিদ্র্যতার কারণে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারেননি ১৪ বছর বয়সী কামরু। কয়েক বছর আগে কুতুপালংয়ে এসে এখন যৌনকর্মী তিনি। ক্ষুধার জ্বালায় যৌনকর্মী হওয়ার কথা জানান তিনি। প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত তিনজনের কাছে নিজের শরীর বিক্রি করেন রমিদা। কখনও ঝুঁকি নিয়ে তাকে দালালদের সঙ্গে যেতে হয়। তিনি জানান, কখনও আমাকে কক্সবাজার শহরে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। আর যখন ক্যাম্পে ফিরে আসি, তখন অন্যদের কাছে বলতে হয় আত্মীয়ে সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি কিংবা বাজারে ছিলাম। সূত্র : মালয়েশিয়া কিনি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn