ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জি বলেছেন, এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর বারবার হিংসাত্মক আক্রমণ একটি বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় আঘাত। অথচ ৯ মাস ব্যাপী মুক্তি সংগ্রাম, বিপুল সংখ্যক মানুষের ভয়াল মৃত্যু, অসহনীয় নিপিড়ন, লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সর্বকালের সর্বসময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  মঙ্গলবার অপরাহ্নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ আবদুর রব হল মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রদত্ত সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি গ্রহণের পর সেখানে উপস্থিত ছাত্র শিক্ষক ও সুধী সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি উপরের কথাগুলো বলেন।  প্রণব মুখার্জি বলেন, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আততায়ীর গুলিতে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধিকে যেমনি ভারতবাসী ও জগতের মানুষ হারিয়েছিল, তেমনি একইভাবে শেখ মুজিবুর রহমান গভীর রাতের অন্ধকারে নিহত হয়েছিলেন একদল ঘাতকের নৃশংস আক্রমণে। 
 
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, একটি দেশ বাংলাদেশ সবেমাত্র স্বাধীন হয়েছে। ছিল দেশ গড়ার অনেক সমস্যা, দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বহুমুখী সংকট। সেই সাথে ছিল মানুষের দারিদ্র ও কর্মসংস্থানহীনতার সমস্যা। সেই সংকটকালে বাংলাদেশের জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যা করে এই জাতির স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে জাতির পথচলার শুরুতেই গুঁড়িয়ে দেয়া হলো। পৃথিবীর কোনো দেশে এ নজির খুব বেশি নেই। অথচ অন্যদিকে আমেরিকা স্বাধীনতা লাভের অনেক বছর পর সেদেশের নেতা আব্রাহম লিংকন নিহত হয়েছিলেন।  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি গ্রহণের নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রণব মুখার্জি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এই সময় তিনি বলেন, এই সম্মান তাকে অভিভূত করেছে। তিনি নিজেকে সম্মানিত মনে করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক  তৈরি করবে বলে আশাব্যক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মনন-বিচার ও বিশ্লেষণ কেন্দ্র। তাই গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করণের মাধ্যমে উচ্চ মান সম্পন্ন গবেষক ও দেশপ্রেমিক-সুনাগরিক মানবসম্পদ উৎপাদন করাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য। 
 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ডি-লিট ডিগ্রি, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও প্রতিকৃতি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির হাতে তুলে দেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। চবি উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ধন্যবাদসূচক বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সফিউল আলম, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ এফ এম আওরঙ্গজেব, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহামদ, আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান, জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শংকর লাল সাহা প্রমুখ। বিকালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি রাউজান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ গেইট সংলগ্ন স্থানে স্থাপিত ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে ফাঁসিতে আত্মাহুতিদানকারী অকুতোভয় যোদ্ধা মাস্টারদা সূর্য সেনের আবক্ষমূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান। সেখান থেকে তিনি মাস্টারদা সূর্য সেন স্মৃতি ভবনে গিয়ে সূর্য সেন স্মৃতিপাঠাগার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। সেখানে রক্ষিত স্মারক খাতায় তার অনুভূতি লিখেন ও স্বাক্ষর করেন। এর আগে তিনি রাউজানে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান রাউজানের সংসদ সদস্য, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, সূর্য সেন স্মৃতিপাঠাগারের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত  প্রমুখ।
রাউজান থেকে প্রণব মুখার্জি সরাসরি নগরীর রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ হোটেলে পৌঁছেন। সেখানে রাত ৮টায় চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত একটি ভোজ সভা ও সুধী সমাবেশে তিনি যোগদান করেন। এখানে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রণব মুখার্জিকে চট্টগ্রাম নগরীর চাবি উপহার দেন। বুধবার সকালে প্রণব মুখার্জি ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ বিমানে একটি বিশেষ ফ্লাইটে চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছেন। বিমান বন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান চট্টগ্রাম মহানগরী পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান চৌধুরীসহ চট্টগ্রামের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn