বার্তাডেস্ক:: হাওরবাসীর উন্নয়নে বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিল্প-কারখানা স্থাপন, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা ও নদীভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এছাড়া দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, জলমহালগুলো প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হাওর অঞ্চলের মানুষদের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘হাওরবাসীর জীবন-জীবিকা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের ওয়াটার রিসোর্চ ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট প্রবাল সাহা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ‘সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’ নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ গবেষণা পরিচালনা করে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ওয়ার্ল্ড ভিশনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান। ব্র্যাকের পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নান, ব্র্যাকের সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান শ্যাম সুন্দর, ওয়ার্ল্ড ভিশনের হিউম্যানেটেরিয়ান অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ডোলন যোসেফ গোমেজ প্রমুখ।

গত বছর আকস্মিক বন্যায় হাওরবাসীর জীবন-জীবিকা ও আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাদের সামগ্রিক উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ইউকেএইডের অর্থায়নে ও ইউনাইটেড ন্যাশন্স অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেসের (ইউএনওপিএস) ব্যবস্থাপনায় ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড রিকভারি প্রজেক্ট’ (এফএফআরপি) গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক, সেভ দি চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন। এ পরিস্থিতিতে হাওরবাসীর উন্নয়নে করণীয় নিরূপণে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। চলতি বছরের ৭ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ৪টি, দিরাই উপজেলায় ৩টি এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় ২টি কমিউনিটির মধ্যে জরিপ পরিচালিত হয়। গুণগতভিত্তিতে পরিচালিত জরিপে কমিউনিটির মোট ১২৬ জন মানুষ ও স্থানীয় সরকারের ৯ জন অংশ নেন। এর অধিকাংশই হাওরবাসীর উন্নয়নে জরুরি করণীয় হিসেবে বিকল্প কর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ জোর দেন। এ জন্য তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানা স্থাপন, সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রদানের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তার দাবি জানান। এছাড়া উৎপাদিত কৃষিজপণ্য বিক্রি না হওয়ার জন্য ‘ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনা’কে বড় সমস্যা হিসেবে তারা চিহ্নিত করেন। গবেষণায় যেসব সুপারিশ করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- হাওরবাসীর সমস্যা মোকাবেলায় স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া, দীর্ঘমেয়াদি কৃষিজ পরিকল্পনা, আপদকালে জলমহাল উন্মুক্তকরণ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আগাম সতর্কতার জন্য কারিগরি উন্নয়ন ঘটানো।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn