টেবিল পেতে ‘ঘুষ’ নেন এঁরা কারা?

বগুড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বগুড়া কার্যালয়। দোতলায় সহকারী পরিচালকের পাশের কক্ষে চেয়ার-টেবিলে খাতা নিয়ে বসে আছেন ডাবলু নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তাঁর সামনে লোকজনের ভিড়। একজনকে ডাকছেন তিনি। টাকা নিচ্ছেন আর খাতায় লিখে রাখছেন ওই ব্যক্তির নাম। ১৯ মার্চ বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে এ দৃশ্য দেখা যায়। কিসের টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম নামের একজন ট্রাকচালক বলেন, ‘আমি রুট পারমিটের জন্য এসেছি। উনি (ডাবলু) এখানকার ক্যাশিয়ার। নানা কাজে আসা লোকজনের কাছ থেকে ঘুষের টাকা জমা নেন তিনি। টাকার হিসাব রাখতে খাতায় লিখে রাখেন। রুট পারমিট বাবদ আমিও (রফিকুল) তাঁকে ১ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি।’ ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার দৈনিক প্রথম আলোতেটেবিল পেতে ‘ঘুষ’ নেন এঁরা কারা?’ শিরোনামে প্রকাশিত এক সংবাদে জানানো হয়েছে এ তথ্য।

রফিকুলের কথার সূত্র ধরে এক সপ্তাহ বিআরটিএ বগুড়া কার্যালয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বগুড়া সদরের ধরমপুর এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক ওরফে ডাবলু বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মচারী নন। প্রায় ছয় বছর ধরে কার্যালয়ে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে ঘুষ আদায় করছেন তিনি। শুধু ডাবলু একাই নন, ঘুষের টাকা তোলার জন্য এ কার্যালয়ে আরও অন্তত পাঁচজন রয়েছেন। তাঁরা প্রতিদিন সকাল থেকে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে এ কার্যালয়ে নানা কাজে আসা লোকজনের কাছ থেকে ঘুষের টাকা তোলেন। খাতাপত্রে হিসাব রাখেন। সপ্তাহ শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে হিসাব বুঝিয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এখানে ঘুষ লেনদেন অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। প্রতিটি মোটর সাইকেলের নিবন্ধনের জন্য সরকারি ফির বাইরে ২ হাজার টাকা দিতে হয় শোরুম মালিকদের। তা থেকে ১ হাজার টাকা পৌঁছে যায় কর্মকর্তাদের কাছে। তবে সরাসরি নয়। সহকারী পরিচালকের নিয়োজিত ‘কোষাধ্যক্ষ’ ডাবলুর কাছে এ টাকা পৌঁছে দেন শোরুমের লোকজন। মোটর সাইকেলের নিবন্ধনের কাগজপত্র বিআরটিএতে জমা দিতে গিয়ে ঘুষ গুনতে হয় আরও দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া বাস-ট্রাকসহ যেকোনো বাস বা ট্রাকের রুট পারমিটের জন্য ১ হাজার (এ ক্ষেত্রে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা হয় না), বড় গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৬ হাজার, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসের নিবন্ধনের জন্য ৪ হাজার, সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধনের জন্য ১০ হাজার, অন্য জেলার সিএনজি ক্রেতাদের ঠিকানা জালিয়াতির মাধ্যমে বগুড়া জেলার বাসিন্দা দেখিয়ে নিবন্ধনের জন্য ২০ হাজার, পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দেড় থেকে ২ হাজার, মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ৩ হাজার, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি ওঠানোর সময় ১০০ এবং লাইসেন্স সরবরাহের সময় ১০০ টাকা ঘুষ আদায় করা হয় বিআরটিএর এই কার্যালয়ে। এর মধ্যে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দীর্ঘদিন বগুড়া জেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া এবং জেলার মধ্যে তা কেনাবেচা বন্ধের সিদ্ধান্ত ছিল। ওই সময় অনেকে বিভিন্ন জেলার ঠিকানায় অটোরিকশা বিক্রি করেন স্থানীয় ডিলাররা। এখন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হওয়ায় বাইরের জেলার ঠিকানায় কেনা অটোরিকশা নিবন্ধনের জন্য ক্রেতারা বিআরটিএর দালালদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। দালালেরা শোরুম ডিলারদের কাছ থেকে বগুড়ার ঠিকানায় কাগজপত্র জোগাড় করে দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মিনি ট্রাকসহ হালকা ও মাঝারি যানবাহনের ফিটনেসের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ৯৪৫ টাকা, বড় বাস-ট্রাকের ফি ১ হাজার ২৪৫ টাকা। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি ২ হাজার ৫৪২ টাকা এবং পেশাদার লাইসেন্সের ফি ১ হাজার ৫৭৫ টাকা। মালিকানা পরিবর্তন মোটরসাইকেল ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ১০০, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ১২ হাজার ৫০০, ট্রাক ও বাস ৫ হাজার ৭৫০ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফির এক-তৃতীয়াংশ। মোটরসাইকেলের নিবন্ধন, ট্যাক্স, ডিজিটাল নম্বরপ্লেট ও ডিজিটাল সনদসহ ১২ হাজার ১১৫ টাকা থেকে ১৮ হাজার ৪১৫ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস ৮ হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার ৫০০, ট্রাক ৭৫ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn

এ বিভাগের আরো খবর

একজন খোকন মাষ্টার- সুপ্ত বাসনা যার হৃদয়ে

একজন খোকন মাষ্টার- সুপ্ত বাসনা যার হৃদয়ে

শিক্ষা গুরু বাবু সুবোধ রঞ্জন দাস

শিক্ষা গুরু বাবু সুবোধ রঞ্জন দাস

মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর

মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর