ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিতে যোগদানের পর বাংলাদেশি অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তিনি আদতে কোন দেশের নাগরিক এনিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। বাংলাদেশি অভিনেত্রী হয়েও কী করে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য হলেন সেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিকে বিজেপির দাবি, জন্মসূত্রে অঞ্জু ঘোষ ভারতীয় নাগরিক এবং তার জন্মসনদ, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং ভোটার কার্ড রয়েছে। ভারতের জিনিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বুধবার ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ ছবির অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ বিজেপিতে যোগ দেন। তার যোগদানের পরই অভিনেত্রীর নাগরিকত্ব নিয়ে উঠতে শুরু করে প্রশ্ন। এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নও এড়িয়ে যান অঞ্জু ঘোষ। তৃণমূল কংগ্রেসও দাবি করে, অঞ্জু ঘোষ বাংলাদেশের নাগরিক। এমনকি উইকিপিডিয়াতেও জ্বলজ্বল করছে, অঞ্জু বাংলাদেশি অভিনেত্রী।

বিতর্কের মুখে বৃহস্পতির অঞ্জু ঘোষের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত যাবতীয় নথি পেশ করে বিজেপি। প্রকাশ করা হয়, তার ট্যাক্স কার্ড, জন্মের সনদ। ০০৬৬০৮৫ নম্বরের সনদ অনুযায়ী, অঞ্জু ঘোষের জন্ম হয়েছে কলকাতার ইস্ট এন্ড নার্সিংহোমে। জন্ম তারিখ-১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬। এদিকে, অঞ্জু ঘোষের জন্মের সনদের সঙ্গে আবার ট্যাক্সকার্ডের তথ্যে ধরা পড়েছে অমিল। ওখানে জন্ম তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৭। নথি বলছে, অঞ্জু ঘোষ কলকাতার নাগরিক। কিন্তু শিল্পীর পরিচিতরা বলছেন, বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম হয়েছে অঞ্জু ঘোষের। তার জনপ্রিয় ছবি ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ও প্রথমে বাংলাদেশে নির্মিত হয়েছিল। পরে সেটির রিমেক হয় ওপার বাংলায়। ওই ছবিটির আগে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ছবিতেও কাজ করেন অঞ্জু ঘোষ। কিন্তু এটা সত্যি দীর্ঘ দুই দশক ধরে ওপার বাংলাই অঞ্জুর স্থায়ী ঠিকানা। ২০১৮ সালে ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ ছবির কলাকুশলীদের নিয়ে বাংলাদেশে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন অঞ্জু ঘোষ। ২৩ বছর পর পা রেখেছিলেন বাংলাদেশে। সেখানে অঞ্জু বলে এসেছেন, ”এখান থেকে নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম। এটাই তো আমার দেশ। আমরা বাঙালি। আমি বাঙালি। এটা কোনও ক্ষোভ নয়। গর্ব বোধ করা উচিত”। অঞ্জু ঘোষের এই নাগরিকত্ব বিতর্ক নিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, বিজেপি যাকে খুশি দলে নিচ্ছেন এমন কি তার নাগরিকত্বও দেখছে না।

কলকাতার মেয়রের এমন বক্তব্য শোনার পরই দ্রুত বিজেপি রাজ্য দপ্তরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন বিজেপি নেতা জয় প্রকাশ মজুমদার। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অঞ্জু ঘোষের জন্ম সনদ যা কলকাতা করপোরেশন থেকে ২০০৩ সালে রেজিস্টার করা রয়েছে সেটা প্রকাশ করেন। এসময় বিজেপি নেতা জয় প্রকাশ মজুমদার বলেন, তৃণমূল এতো নিচে নেমে গিয়েছে যে তারা কিছু না বুঝেই বিতর্ক উসকে দিচ্ছে। জন্ম সনদটি ভুয়া কিনা সেটা তো তৃণমূল কংগ্রেসই বুঝতে পারবে। কারণ তৃণমূলের মেয়র সুব্রত মুখার্জির সময়ই এই বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল। ফলে বিজেপির থেকে তৃণমূল ভালো বুঝতে পারবে যে অঞ্জু ঘোষ কোন দেশের নাগরিক। আর সে যে ভারতীয় সেটা প্রমাণ হয় তার এই সব কাগজপত্রে। তাই এ নিয়ে আর বিতর্ক না করার জন্যই তিনি সব দল এবং গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn