সু,বার্তা ডেস্ক :: যুক্তরাজ্যে রেস্টুরেন্ট কর্মী নেয়ার কোনো নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে সেখানকার বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ)। এ ধরণের সংবাদ অসত্য বলে নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) পূর্ব লন্ডনে ‘লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষকে প্রতারিত করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশে ব্রিটেনে রেস্টুরেন্টকর্মি আনার ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাস্তবে রেস্টুরেন্টে বিদেশিকর্মী আনার কোনো নতুন নিয়ম চালু হয়নি। তবে আশার কথা শুনিয়ে বিসিএ নেতৃবৃন্দ বলেন, রেস্টুরেন্টে বিদেশি কর্মী নিয়োগের নিয়ম শিথিল করার জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন যাবত জোর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব আন্দোলনের ফল ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে। সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, অভিবাসন নীতি প্রণয়নে সরকারকে সুপারিশ করে ‘মাইগ্রেশন এডভাইজরি কমিটি’ (ম্যাক)। এ কমিটির সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিসিএর দাবি অনেকটা বিবেচিত হয়েছে। তাঁরা কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট কর্মী নিয়োগের নিয়ম শিথিল করার সুপারিশ করেছে। তবে এসব সুপারিশ ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ের জন্য। সরকার এসব সুপারিশ গ্রহণ করলেও তা ২০২০ সালের আগে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
নেতৃবৃন্দ জানান, এখনই যারা ভিসা সহজ হয়ে গেছে বলে প্রচার করছেন তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত কয়েকদিন যাবত বাংলাদেশ থেকে লোকজন যুক্তরাজ্যে নিজেদের পরিচিতজনদের সাথে যোগাযোগ করছেন। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এ নিয়ে হুলস্থুল পড়ে গেছে। এক শ্রেণির দালাল চক্র টাকা-পয়সার লেনদেন শুরু করে দিয়েছে। তাই রেস্তোরাঁ খাতের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হিসেবে মানুষকে সচেতন করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অনেক সাংবাদিকও বলেন যে, দেশ থেকে তাঁদের কাছে অনেকেই নতুন রেস্টুরেন্ট ভিসা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিসিএর প্রেসিডেন্ট কামাল ইয়াকুব বলেন, পূর্বের ইমিগ্রেশন নীতিতে যে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল তা হচ্ছে যেসব রেস্টুরেন্টে টেকওয়ে সার্ভিস আছে, যেসব রেস্টুরেন্ট ওয়ার্ক পারর্মিটের আওতায় ছিল না। মাইগ্রেশন এডভাইজরী কমিটির বর্তমান সুপারিশে রেস্টুরেন্ট এবং টেকওয়ে সমান বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, বিসিএ এই বিষয়টি চিহিৃত করে দীর্ঘদিন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে  লবিং করে আসছিলো। তবে ইমিগ্রেশন এডভাইজরি কমিটি শেফদের ২৯ হাজার ৭৫০ পাউন্ডের যে বার্ষিক বেতন নির্ধারিত রেখেছে তাঁতে সন্তুষ্ট নয় বিসিএ। তাঁরা এ বেতন ১৮ থেকে ২০ হাজারে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে।

বিসিএর জেনারেল সেক্রেটারি অলি খান বলেন, রেস্টুরেন্ট খাতের কর্মী সংকট সমাধানের একটি উপায় হিসেবে বিসিএ অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা প্রদানেরও দাবি করে আসছে। অবৈধভাবে বসবাস করা ব্যক্তিদের অনেকেই রেস্টুরেন্ট কাজে দক্ষ। এদের বৈধতা দেয়া হয়েছে রেস্টুরেন্ট খাতের কর্মী সংকট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। বিসিএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনাম উল হক চৌধুরী বলেন, রেস্টুরেন্টে বিদেশি কর্মী আনার নিয়ম শিথিল করতে বিসিএ যে কাজ করে যাচ্ছে তার সুফল আসতে শুরু করেছে। বিসিএ এ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। কিন্তু কোনো কোনো অসাধু ব্যক্তি রেস্টুরেন্টকর্মী আনার নিয়ম সহজ হয়ে গেছে বলে যে প্রচার চালাচ্ছেন তা ভয়ঙ্কর। এমন অপপ্রচারের বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রেস্টুরেন্ট কর্মীর বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত বিসিএ সময় সময় জানাবে। বিশেষ করে বিদেশী কর্মী আনার যে কোনো সুযোগ আসলে তা বিসিএ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে। এ নিয়ে কেউ যেনো ব্যবসা করতে না পারেন সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার আহবান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রেস্টুরেন্ট খাতের কর্মী সংকটের বাস্তবচিত্র তুলে ধরতে তাঁরা একটি কোয়েশ্চানেয়ার চালু করেছেন। এতে রেস্টুরেন্ট মালিকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অন্তত ৫ হাজার রেস্টুরেন্টের চিত্র সরকারের কাছে তুলে ধরতে চায় বিসিএ। যাতে কারি শিল্পের অনুকুলে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে বাধ্য করা যায়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন বিসিএর প্রেস সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন টিপু। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সভাপতি কামাল ইয়াকুব, সাধারণ সম্পাদক ওলি খান এবং চীফ ট্রেজেরার সাইদুর রহমান বিপুল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠু চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন চ্যানেল এসের চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn