ওয়েছ খছরু–নাম শারমিন। ওরস গানের জগতে নাম ‘ডপকি’ শারমিন। গান গাইলে হাতে থাকে ডপকি। নিজেও বাজান ডপকি। এ কারণে নাম দেয়া হয়েছে ডপকি শারমিন। এই ডপকি শারমিনকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সিলেটের বাউলদের মধ্যে কানাঘুষার অন্ত নেই। দেখা দিয়েছে ক্ষোভও। গানে ‘বিতর্কিত’ বিষয় তুলে  আনায় তার বিরুদ্ধে ক্ষেপেছেন কেউ।ডপকি শারমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিলেটের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে বুধবার স্মারকলিপি দিয়েছেন বাউল কল্যাণ ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ফকির শাহ তোফাজ্জুল হুসেন ভাণ্ডারি। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরেরও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ডপকি শারমিন সিলেটের উরস উপলক্ষে আয়োজিত গানের আসরে এক পরিচিত নাম। মাজারকেন্দ্রিক গানের আসর হলেই ডাক পড়ে তার। এ কারণে অনেকের কাছে তিনি পরিচিত। মূল বাড়ি নরসিংদীতে। পিতার সূত্র ধরে অনেক দিন তারা মৌলভীবাজারে বসবাস করেছেন। তার আরেক বোন নার্গিসও গান গাইতেন। বেহায়াপনার গানের জন্য নার্গিসও বিতর্কিত হন মৌলভীবাজারে। সিলেটের বাউল সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, ডপকি শারমিন এখন মৌলভীবাজার ছেড়ে নরসিংদীতে চলে গেছেন। গত এক বছর ধরে সিলেটের উরসে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান গাইতে আসেন ডপকি শারমিন। প্রায় সময় তাকে নিয়ে নানা কথা-বার্তা শোনা যায়। সর্বশেষ গত ১৫ই জুন প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার পৌর পয়েন্টে রুবেল সাউন্ড সিস্টেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে শিল্পী হিসেবে দাওয়াত দেয়া হয় ডপকি শারমিনকে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাউল কল্যাণ সমিতি, সিলেট বিভাগীয় সভাপতি কামাল উদ্দিন রাসেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর গান গাইতে উঠেন ডপকি শারমিন। এ সময় তিনি ধর্মীয় বিতর্কিত বিষয় নিয়ে গান গাওয়া শুরু করেন। একই সঙ্গে মঞ্চে অশ্লীলতা শুরু করেন বলে জানিয়েছেন বাউল কল্যাণ সমিতি, সিলেট বিভাগীয় সভাপতি কামাল উদ্দিন রাসেল। তিনি উপস্থিত থাকায় ডপকি শারমিনকে বিতর্কিত বিষয় নিয়ে গান পরিবেশন না করার আহ্বান জানান। এ নিয়ে অনুষ্ঠানে কিছুটা হট্টগোল দেখা দেয়। পরে রাত ২টার দিকে অশ্লীলতার অভিযোগ থাকায় জগন্নাথপুরের প্রশাসন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন। এদিকে, অনুষ্ঠানের পর থেকে ডপকি শারমিনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলেন সিলেটের বাউলরা। এই আলোচনার ফাঁকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার কারণে ডপকি শারমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বাউল কল্যাণ ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ফকির শাহ তোফাজ্জুল হুসেন ভাণ্ডারি এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়- ‘ডপকি’ শারমিন সিলেটের বিভিন্ন মাজার, উরস ও স্টেজ অনুষ্ঠানে গানের নামে দেওয়ানবাগীর বিতর্কিত মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছেন। এতে সিলেটের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ডপকি শারমিনের সিলেটে আসা এবং গান গাওয়া থেকে বিরত রাখারও অনুরোধ জানানো হয়। বাউল কল্যাণ সমিতি সিলেট বিভাগীয় সভাপতি কামাল উদ্দিন রাসেল গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, জগন্নাথপুরের অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি তার সম্পর্কে জানতে পারি। এবং তার বিতর্কিত মতবাদ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। বিষয়টি আমি গানের মাধ্যমে শোনার পর আহত হয়েছি। ডপকি শারমিনের বিরুদ্ধে তারা শিগগিরই মামলা দায়ের করবেন বলে জানান। এরই মধ্যে তিনি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। বাউলরা জানিয়েছেন- মৌলভীবাজার, নবীগঞ্জ, সিলেটের শেরপুর, গোয়ালাবাজার, বিশ্বনাথ, জগন্নাথপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ডপকি শারমিনের নিয়োজিত এজেন্টরা রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই ডপকি শারমিন সিলেটে আসে। এবং তার মতবাদ প্রচার করে। যা নিয়ে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে জগন্নাথপুরের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে কামাল উদ্দিন রাসেল তার নিজের ফেসবুক আইডিতে ওই দিনের ঘটনা তুলে ধরেছেন। স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি শুধু কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে যাইনি, এসব অনুষ্ঠান থেকে আমার অনেক কিছু জানার বা শিখার আছে সেই আগ্রহ নিয়ে আমি এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই। এই শিল্পী গান পরিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে কাপড় তুলে দর্শকদের কী দেখাতে চায় তাও বুঝলাম না। সেই আগ্রহ নিয়ে আমি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলাম। বাউল শিল্পী নামধারী ডপকি শারমিন আসলে কে? সে কার মিশন বাস্তবায়ন বা প্রচার করতে বাউল গানকে বেছে নিয়েছে তা আমি প্রমাণসহ আপনাদের সামনে যেকোনো সময় তুলে ধরবো ইন্‌শাআল্লাহ।’ স্ট্যাটাসে তিনি আরো উল্লেখ করেন- আমি জানি, তার নিজ মুখে যে বক্তব্য দিয়েছে এবং যার প্রশংসা করে তার নাম প্রচার করেছে তাকে উপমহাদেশের গোটা আলীম সমাজ কাফির ফতোয়া দিয়েছে। সে আসলেও আমার দৃষ্টিতে কাফের, আর ডপকি শারমিন হলো সেই কাফেরের অনুসারী। সে কি করে বাউল শিল্পী হয় তা আমার বুঝে আসছে না। এই অনুষ্ঠানে তাকে আমি সর্বপ্রথম দেখি ও সে আসলে কে তাও আমি জানতে পেরেছি।’ তার পোস্টের জবাবে সিলেটের অনেক বাউল শিল্পী এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে মন্তব্য করেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn