রবিউল ইসলাম-.আগামী মঙ্গলবার বার্মিংহামের এজবাস্টনে মুখোমুখি হবে ভারত ও বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর ধরে এই দুই দলের ক্রিকেটীয় লড়াই চলে গেছে অনন্য উচ্চতায়। এবারও উত্তেজনায় ঠাঁসা এক ম্যাচ হবে প্রত্যাশা ভক্ত-সমর্থকদের। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ম্যাচ হলেই নড়েচড়ে বিশ্ব। বাড়তি উন্মাদনা আর উৎসাহ নিয়ে এই দ্বৈরথের আকাঙ্ক্ষায় বসে থাকেন সমর্থকরা। এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশও। ভারত-বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের উত্তেজনা এখন শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও। সামাজিক মিডিয়ায় তো দুই দলের সমর্থকদের খুনসুটি কখনও কখনও সীমা ছাড়িয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়, আর বিশ্বকাপ বলে এক সপ্তাহ আগে থেকেই উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে ভালোভাবে। এমনকি বার্মিংহামেও বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে দুই দলের সমর্থকদের নিয়ে বিপুল আগ্রহ দেখা গেছে। প্রবাসী বাংলাদেশি অনেক ভক্ত একটি টিকিটের আশায় হন্যে হয়ে ঘুরছেন। ওভাল, কার্ডিফ, টন্টন, নটিংহাম ও সাউদাম্পটনে গ্যালারির অধিকাংশ সিট বাংলাদেশি সমর্থকদের দখলে থাকলেও বার্মিংহামে সেটা হচ্ছে না বোঝা যায়।  সবশেষ ২০১৭ সালের চ্যাস্পিয়নস ট্রফিতে এই মাঠেই খেলেছিল বাংলাদেশ। ওইবার গ্যালারির বেশির ভাগ জায়গাই ছিল ভারতীয়দের দখলে। মূলত এই শহরে ভারতীয় নাগরিকদের বসবাস বেশি থাকায় বাংলাদেশি সমর্থকরা তাদের কাছে পেরে উঠেন না। বাণিজ্যিক কারণে ভারতীয় নাগরিকদের কিছুটা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এজন্য প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি বহু চেষ্টা করেও টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারছেন না।

খলিল নামের এক বাংলাদেশি ট্যাক্সি ড্রাইভার জানালেন, ‘আমরা খেলা দেখবো, বেশ কিছু টিকিট প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও টিকিট পাচ্ছি না। যদিও অনেকের কাছে টিকিট আছে। কিন্তু ৬০ পাউন্ডের টিকিট ২০০ পাউন্ডে কিনতে হচ্ছে। এই দামে টিকিট কেনা সত্যিই কঠিন। সম্ভবত এবারও বার্মিংহামে আমাদের দর্শক কমই হবে।’ ব্রিটিশ বংশোদ্ভুত এক ভারতীয় চাকরি করেন স্থানীয় একটি শপে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে এগিয়ে এলেন। বার্মিংহামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত কতটা এগিয়ে সেটাই জানাচ্ছিলেন নিগরাল রশনি নামের এই নারী। এই ম্যাচটি নিয়ে তারা কতটা উত্তেজিত, সেটাই জানালেন, ‘বার্মিংহামে বাংলাদেশে বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে আমরা অপেক্ষায় আছি। আগামী ২ জুলাই আপনাদের দলের বিপক্ষে গলা ফাটাবো। গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো আমরাই জিতবো। তবুও আপনাদের জন্য শুভ কামনা। জানেনই তো এই মাঠে আমাদের দর্শক বেশি থাকবে।’ দর্শক কম আর বেশি হোক, এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না বাংলাদেশ। দলের ভাবনা কেবল ম্যাচ জেতা নিয়ে। পয়েন্ট টেবিলের প্রথম দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দল হিসেবে নিউজিল্যান্ড ও ভারতের সেমিফাইনাল খেলা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে চতুর্থ দল হিসেবে সেমিফাইনালের দৌড়ে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আছে বাংলাদেশ। এই চারটি দলের হার-জিতের ওপর নির্ভর করছে বাকি জায়গাটি।

সেমিফাইনালের পথটা সহজ করতে হলে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচ বাংলাদেশকে জিততেই হবে। দুটি ম্যাচ জিতলেও নকআউট পুরাপুরি নিশ্চিত নয়, তখন হয়তো দুটিতেই ইংল্যান্ডের হারের অপেক্ষা করতে হবে। মাশরাফি অবশ্য জটিল অঙ্কে যেতে চান না। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচকে সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল হিসেবে দেখছেন ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘আমাদের কাছে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল। শক্তিতে আমরা কতটা পিছিয়ে আর ওরা কতটা এগিয়ে এসব ভাবার সুযোগ নেই। সেমিফাইনালে যেতে হলে আমাদের ম্যাচ জিততে হবে। সেটা কঠিন হলেও আমাদের কাজটা ঠিকমতো করতে হবে।’ বিশ্বকাপে দুই দল এখন পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ জিতেছে একটি, আর ভারত দুটি। ২০০৭ সালে পোর্ট অব স্পেনে বিশ্বকাপে প্রথম দেখায় জিতেছিল বাংলাদেশ। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, মহেন্দ্র সিং ধোনি, জহির খান, যুবরাজ সিং, হরভজন সিংদের নিয়ে গড়া ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতকে ১৯১ রানে অলআউট করতে ৪ উইকেট নেন মাশরাফি। তিনটি করে পান আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ রফিক। তামিম ইকবাল(৫১), মুশফিকুর রহিম (৫৬) ও সাকিব আল হাসানের(৫৩) ব্যাটে ৯ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়বার দেখায় মুখোমুখি হার মেনেছিল বাংলাদেশ। ভারতের করা ৩৭০ রানের জবাবে বাংলাদেশ ২৯০ রানে থেমে যায়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে মেলাবোর্ন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ১০৯ রানে হেরেছিল। এছাড়া সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত টাইগাররা ৩৫ ম্যাচ খেলেছে ভারতের বিপক্ষে। বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ৫ ম্যাচ, ২৯টি ভারত। দুই দলের শেষ দেখা হয়েছিল গত বছরের এশিয়া কাপ ফাইনালে। শেষ ওভারে দিনেশ কার্তিকের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে পরাস্ত হয় বাংলাদেশ। অবশ্য একই ভেন্যুতে দুই বছর পর দেখা হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশের। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওই হারের আক্ষেপ মুছে ফেলার সুযোগ মাশরাফিদের সামনে, বিশ্বমঞ্চে ‘নতুন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’কে হারাতে পারলে আর কী লাগে!

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn