দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে বহু বাঙালি হিন্দু তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়। যাদের বেশিরভাগই সনাতন ধর্মাবলম্বী। ১৯৭৯ সালে মধ্য-নিম্নবিত্ত শ্রেণির সেই বাঙালিরা নানা রাজনৈতিক কূটকৌশলে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশের মরিচঝাঁপি দ্বীপে আশ্রয় নেয়। নিজ উদ্যোগে সেখানকার জঙ্গল পরিষ্কার করে বন্যা থেকে বাঁচার জন্য বাঁধ নির্মাণ, মৎস্য চাষ ও চাষাবাদের ব্যবস্থা করে উক্ত দ্বীপে বসবাস করতে শুরু করেন তারা। কিন্তু শরণার্থীদের স্বীয় উদ্যোগে এই পুনর্বাসন মেনে নেয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উদ্বাস্তু হয়ে আসা বাংলাদেশি হিন্দু শরণার্থীদের বলপূর্বক উচ্ছেদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন পুলিশ বাহিনী কোরানখালি নদীতে অবরোধ বসায়; যেন মরিচঝাঁপি দ্বীপের শরণার্থীরা নদী পার হয়ে বাঁচতে না পারে। সেই দিনগুলোর ঘটনা স্মৃতিচারণ করে বেঁচে ফিরে আসাদের একজন নারায়ণ মণ্ডল। তিনি উল্লেখ করেন, সেদিন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ৩০ থেকে ৩৫টি লঞ্চ পুরো দ্বীপটি ঘিরে ফেলে। কুমিরমারি থেকে খাবার জল আনতে যাবো, সেই পরিস্থিতিও ছিল না। আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছিল। আমরা নারকেলের পাতা ও ঘাস খেতে বাধ্য হই। বাচ্চাদের অনেকেই শুধু ডায়রিয়াতেই মারা যায়। টানা অবরোধে না খেয়ে ও অসুখে মারা যায় ১ হাজার বাংলাদেশি শরণার্থী।

এবার সেই ঘটনা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে কলকাতায় বাংলা চলচ্চিত্র।
মুম্বাইয়ের নির্মাতা বৌদ্ধায়ন মুখার্জি এটি তৈরি করছেন। এর নাম রাখা হয়েছে ‘মরিচঝাঁপি’। গত সপ্তাহে চলচ্চিত্রটি নিয়ে একটি পোস্টারও প্রকাশ করা হয়েছে। আর এর বেশিরভাগ চরিত্রে থাকবেন বলিউড শিল্পীরা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বৌদ্ধায়ন মুখার্জি বলেন, ‘এটা ভালোবাসারও উদাহরণ। এই বাংলার মাটি, জল ও হাওয়ার জন্য বহু মানুষকে এক বাংলা থেকে আরেক বাংলায় আসতে হয়েছিল। তাদেরই অনেকে মরিচঝাঁপিতে আশ্রয় নেন।’ মরিচঝাঁপির দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে এই নির্মাতা বলেন, ‘নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে যখন আমি কলেজে পড়ি, তখন এটি সম্পর্কে জানতে পারি। আস্তে আস্তে বুঝতে পারি আমার চারপাশে খুব কম মানুষই আছে, যারা মরিচঝাঁপির বিষয়টি জানেন। ঠিক তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই, এটি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবো।’ দুই বছর ধরে বৌদ্ধায়ন মুখার্জি ছবির পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করছেন। আর চরিত্র বাছাইয়ে শারীরিক গঠন ও দেহভঙ্গিকে প্রাধান্য দিতে চান। এ জন্য বেশিরভাগ শিল্পী আসবে মুম্বাই থেকে। বৌদ্ধায়ন মুখার্জি বেশি পরিচিত তার ‘বেল বাজাও’ ক্যাম্পেইনের জন্য। এছাড়া ২০১৪ সালে ‘তিনকাহন’ ও ২০১৬ সালে হিন্দিতে নির্মিত ‘দ্য ভায়োলিন প্লেয়ার’-এর জন্য সমাদৃত তিনি। সূত্র: সিনেস্তান

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn