বার্তা ডেস্ক:: মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর রাজনৈতিক জীবনের একটি অপ্রকাশিত উপাখ্যান উন্মোচিত হলো মার্কিন গোপন নথিতে। এতে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধ কঠোর সমালোচনা করলেও তিনি বিনম্র থেকেছেন। এনএসআইয়ের ডিজি এস এ হাকিম মার্কিন দূতাবাসকে জানিয়েছিলে, ১৯৭৮ সালের ঢাকায় ওসমানীর ভাষণ শুনতে এক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে রাজনৈতিক সৌজন্য ও শিষ্টাচার বজায় রাখতে তিনি উদাসীন ছিলেন না। বরং অনেক বেশি সতর্ক ছিলেন। নথিতে দেখা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আচরণে মনে কষ্ট পেলেও নম্র ভাষায় প্রতিকার চান জেনারেল ওসমানী। বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল ওসমানী ১৯৭৮ সালের ৩ জুন সরাসরি ভোটে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী হয়েছিলেন। মার্কিন গোপন নথি সাক্ষ্য দিচ্ছে, জিয়াউর রহমান ও তার অনুসারীরা তার সভা অনুষ্ঠানে বাধা দিয়েছিলেন। এজন্য তিনি মনে ব্যথা পান। জিয়াউর রহমানকে ফোনও করেছিলেন। বলেছিলেন, তার সঙ্গে এতটা রুঢ় ও বৈরী আচরণ করলে তিনি সরে দাঁড়াবেন। তখন জিয়া তাকে আচ্ছা আমি দেখছি, দেখব বলে এই বঙ্গশার্দুলকে আশ্বস্ত করেছিলেন।

এনএসআই ডিজি এ এস হাকিম ১৯৭৮ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুদিন আগে মার্কিন পলিটিক্যাল কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। মার্কিন কূটনীতিককে হাকিম বলেছিলেন, ওসমানী সাহেব গত কয়েকদিন ধরে উৎফুল্ল। কারণ তার নির্বাচনী প্রচারণা বেগবান হচ্ছে । আর সেটা দেখে তিনি বিস্মিত পল্টন ময়দানে তার সভায় এক লাখ মানুষ হয়েছে। ওসমানী সাহেব একটি কোয়ালিশনের প্রার্থী ছিলেন। যাতে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ মোজাফফর এবং সিপিবি ছিল। হাকিম সাহেব বললেন, নির্বাচনী প্রচার অভিযানে ওই তিন দলের নেতারা নিজেদের জাহির করতেই ব্যস্ত ছিলেন বেশি । তারা ওসমানী সাহেবের ভাবমূর্তিকে নিজেদের প্রচারের রাজনীতিতে ব্যবহার করেছেন বেশি। এমনকি জনসভাগুলোতে তাকে যে সময়টুকু বলতে দেয়া হয়েছে, তাতে তিনি অসুখী ছিলেন এবং তিনি এমনও বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র বনাম রাষ্ট্রপতি সরকারের মঞ্চ থেকে যেটুকু বলা উচিত, তার থেকে তারা অন্য প্রসঙ্গে গিয়েছেন বেশি । মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্নাইডার ওয়াশিংটনকে লিখেছেন, ওসমানী একাধিকবার নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন । কিন্তু তাকে বারবার বুঝানো হয়েছে , এটি তার করা ঠিক হবে না । বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ওসমানী সাহেব যদি সরে দাঁড়ান, তাহলে নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় আর কোনো গ্রহণযোগ্য প্রার্থী থাকবে না। জিয়াউর রহমান তার বিপরীতে ওসমানীর মতো গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেখতেও আগ্রহী ছিলেন। ওই সময়টা অবশ্য এতটাই কঠিন ছিল সে এনএসআই ডিজি মার্কিন কাউন্সিলরকে বলেছিলেন, তিনি নির্বাচনের আগে কিংবা তার পরপরই কোন একটা অভ্যুত্থান হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn