সুনামগঞ্জ  :: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। নামে বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে কাক্সিক্ষত সেবা জুটেনা জেলাবাসীর। গত সাড়ে তিন বছর ধরে আলট্রাসনোগ্রাম বন্ধ আছে। ফলে বাইরে থেকে ‘গলা কাটা’ দামে আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হচ্ছে রোগীদের। এছাড়াও প্রায় দেড় বছর ধরে এক্সরেও বন্ধ। একটি হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি দুটি বিভাগে সেবা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে এই এলাকার মানুষের। অসহায় মানুষদের বাধ্য হয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ঊর্ধ্বমূল্যে এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হচ্ছে। এছাড়াও সদর হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগেও রক্ত, কফ ও প্রস্রাব পরীক্ষার সাধারণ রিপোর্ট ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট হয় না।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সনের এপ্রিল মাসে হাসপাতালের অধ্যাপক মর্যাদার রেডিওলজিস্ট ডা. আলমগীর পিআরএলে চলে যান। তিনি থাকতে হাসপাতালটিতে নিয়মিত আলট্রাসনোগ্রাম হতো এবং সঠিক রিপোর্ট পেতেন রোগীরা। কিন্তু তিনি অবসরে যাবার পর এই পদে আর কেউ যোগদান করেনি। অভিযোগ আছে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী কেন্দ্রিক ক্লিনিক বাণিজ্যের কারণে এই পদে কাউকে আসতে দেওয়া হচ্ছেনা। এই পদে কেউ যোগদান করলে তাদের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। একই কারণে এক্সরে বিভাগও গত দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে।  স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, একজন রোগীর এই দুটি বিভাগেই গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট হয়ে থাকে। হাসপাতালে নামমাত্র ফি দিয়ে সাধারণ রোগীরা সেবা পাবার সুযোগ আছে। বাইরে এই দুটি সেবা নিতে হলে প্রায় ৭০০ টাকা খরচ পড়ে। দেড় বছর ধরে রেডিওগ্রাফারের পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালে সকল ধরনের এক্সরে বন্ধ রয়েছে।
প্যাথলজি বিভাগেও দৈন্যতা রয়েছে। কেবল কফ, রক্ত, প্রস্রাব এখানে পরীক্ষা হয়ে থাকে। তাছাড়া ইউরিন কালচারসহ গুরুত্বপূর্ণ টেস্টের ব্যবস্থা এখানে নেই। যার ফলে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বিভাগ থেকে রোগীদের কাছ থেকে যে আয় হয় তা ক্যাশিয়ারের কাছে দৈনন্দিন জমা রাখা হলেও তিনি সেটা কোষাগারে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ আছে। পরবর্তীতে তার ইচ্ছে মতোই প্যাথলজির টাকা কোষাগারে জমা রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে দন্ত বিভাগেও এক্সরেসহ অন্যান্য পরীক্ষার সুযোগ নেই। দাঁতের ফিলিং, রুট ক্যানেল করানোও হয় না। যে কারণে বাইরে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ফিলিং ও রুট ক্যানেল করাতে হচ্ছে রোগীদের। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ সুজন বলেন, সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। সাধারণ রোগ নিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ সিলেটে রেফার করে দেয়। তাছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরেসহ গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ইচ্ছে করেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার তদন্ত করা প্রয়োজন।  তিনি বলেন, সিন্ডিকেট করে দুর্নীতির মাধ্যমে হাসপাতালের সেবাকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে। সনাকের সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, হাসপাতালে জনগণ কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না। নানা অভিযোগ আছে রোগীদের। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় মানুষ। সদর হাসপাতালকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা উচিত। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, রেডিওলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার না থাকায় এই দুটি সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে প্যাথলজি বিভাগে সেবা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn