সিলেট  :মৌলভীবাজারের ভয়ঙ্কর প্রতারক জাহাঙ্গীর ও মাসুদ। এলাকায় প্রতারণার শেষ নেই তাদের। প্রতারণার হরেক রকম ব্যবসা তাদের। বিদেশে বিনিয়োগ, ঋণ প্রদান, চাকরি দেয়া, মানবপাচারসহ নানা ব্যবসা তাদের। লোভনীয় অফার দিয়ে ইতিমধ্যে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ‘পরিচিত টাউট’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই দুই প্রতারক টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর থেকে লাপাত্তা এলাকা। কোথাও তাদের খোঁজ নেই। তাদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন শতাধিক মানুষ। একলাখ থেকে শুরু করে কোটি এমন প্রতারণার নজিরও আছে তাদের। অবশেষে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে প্রতারক জাহাঙ্গীর ও মাসুদ। আর গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব সদস্যরা তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প উদ্ধার করেছে। এদিকে- গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে জাহাঙ্গীর ও মাসুদ। জাহাঙ্গীর আলম। বয়স ৪০ কিংবা ৪২ বছর। বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগৎপুর গ্রামে। তার পিতা মৃত সোনা উল্লাহ। শ্রীমঙ্গল শহরে রয়েছে তার মামার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আছে হোটেলও। আর মাসুদ রানার বাড়ি পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ উপজেলার বাহুবল উপজেলার হাজীমাদাম গ্রামে। তার পিতার নাম মাসুদ রানা। তাদের গ্রেপ্তারের পরপরই প্রতারণার শিকার হওয়া লোকজন ভিড় জমান শ্রীমঙ্গল র‌্যাব ক্যাম্পে। সেখানেও তারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অনেক অভিযোগ দেন। আগেই কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তারাও ছুটে যান র‌্যাব ক্যাম্পে। সিলেটের র‌্যাব-৯ এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- প্রতারণার বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসার পর তারা জাহাঙ্গীর ও মাসুদের প্রতারণা নিয়ে অনুসন্ধানে নামে। এতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতারণার পর প্রায় একবছর আগেই ছেড়ে দেয় এলাকা। পাল্টে ফেলে মোবাইল নম্বরও। প্রায় ১০ কোটি টাকার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ থাকার কারণে তারা গোপনে বসবাস করতো। অবস্থান নেয় রাজধানী ঢাকায়। গত শুক্রবার বিকালে র‌্যাব সদস্যরা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত র‌্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের একটি দল এএসপি মো. আবদুুল খালেক ও এএসপি এ কে এম কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাকার পল্টন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এরপর তাদের নিয়ে আসা হয় শ্রীমঙ্গলে। সেখান থেকে তাদের আনা হয় সিলেটের র‌্যাব-৯ এর সদর দপ্তরে। গতকাল দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়ার অফিসার মনিরুজ্জামান এ নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। জানান নানা তথ্য। র‌্যাব জানায়- আটককৃতরা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও অন্যান্য উপজেলায় প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাদের প্রতারণার একটি ছিল তিন হাজার কোটি টাকার দুর্লভ বস্তু ক্রয় করা। প্রায় বছর খানেক আগে তারা মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল এলাকায় ঘোষণা দেয়- তিন হাজার কোটি টাকার একটি দুর্লভ বস্তু আমেরিকায় বিক্রি হয়েছে এবং বর্তমান সরকার এর সঙ্গে গোপনভাবে সম্পৃক্ত আছে। কিন্তু এই টাকা আনতে হলে ৩০০ জন সদস্যসহ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ১০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করে আমেরিকা সরকারকে দেখাতে হবে। এতে সদস্য হতে হলে গোপনীয়তা রক্ষা করে ১ লাখ টাকা এবং তিনশ’ টাকার স্ট্যাম্পে নিজের স্বাক্ষর, ভোটার আইডি কার্ড, ছবিসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট দিতে হবে। সদস্য হওয়ার বিনিময়ে তাদেরকে লন্ডন, আমেরিকা, কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্ল্যাট বাড়ি দেয়া হবে। এই ঘোষণায় তারা মৌলভীবাজার জেলা থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের এই লোভনীয় ঘোষণায় অনেকেই সরল বিশ্বাসে হাতে তুলে দেন টাকা। কথামতো স্ট্যাস্পে লিখিত চুক্তিও হয়। এভাবে লোকদের ঠকানোর পাশাপাশি তারা আরো একাধিক ধান্ধাও চালায়। এর মধ্যে একটি ছিল চাকরি পাইয়ে দেয়া। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ এলাকায় তারা ঘোষণা দেয়- নতুন একটি কোম্পানি এলাকায় আসছে। ওই কোম্পানিতে প্রায় ২০০ জন লোককে চাকরি দেয়া হবে। এজন্য তারা প্রতিজনের চাকরির জন্য এক লাখ টাকা হারে আদায় করে। শ্রীমঙ্গলে জাহাঙ্গীরের মামার হোটেল ব্যবসা রয়েছে। ওই হোটেল থেকেই সে প্রতারণা জাল পাতে।

চাকরিতে লোক ঢুকিয়ে দেয়ার ঘোষণাকালেই তারা শতকরা দুইভাগ সুদে টাকা ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ঋণের আগে জামানত হিসেবে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে জানায়। কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার আশায় অনেকেই অগ্রিম ৫ লাখ টাকা তুলে দেয়। এভাবে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn